অবশেষে এলএনজি সরবরাহ শুরু: নতুন জ্বালানির যুগে বাংলাদেশ

বঙ্গপোসাগরে ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তর জাহাজ

অবশেষে জাতীয় গ্রিডে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হয়েছে। চারমাস সমুদ্রে অপেক্ষার পর এই সরবরাহ শুরু হলো। এরমাধ্যমে নতুন জ্বালানির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। আমদানি আর উচ্চমূল্যের জ্বালানি ব্যবহার শুরু হলো।
শনিবার দুপুর আড়াইটার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই গ্যাস বিতরণ শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে সাড়ে ৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ পূর্ণ সক্ষমতায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
পেট্রোবাংলা এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সূত্র জানায়, দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) দিয়ে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে।
এ বিষয়ে জিটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলি মো. আল মামুন বলেন, শনিবার থেকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস দেয়া শুরু হয়েছে। এখন দৈনিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট বা সাড়ে ৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। আগামী মাস থেকে সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করছে আরপিজিসিএল।
আরপিজিসিএল’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এ টার্মিনালের বার্ষিক রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। সেখান থেকে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র সাড় ৭ কোটি ঘনফুট। বাকি সাড়ে ৪২ কোটি ঘনফুট কবে যোগ হবে সেটি নিশ্চিত নয়। যদিও সাড়ে সাত কোটি ঘনফুট ব্যবহার করলেও গ্রাহকদের পুরো ৫০ কোটি ঘনফুটের দামই পরিশোধ করতে হবে। কারণ সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ এলএনজি ব্যবহার করলেও কাতার গ্যাসকে ওই টাকা দিতে হবে, আর না করলেও দিতে হবে। যতটুকু ব্যবহার ততটুকুর অর্থ পরিশোধের কোন সুযোগ নেই ওই চুক্তিতে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এলএনজি গ্যাস জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সরবরাহের জন্য সমুদ্র উপকুল থেকে আনোয়ারা এবং আনোয়ারা থেকে ফৌজদার হাট পর্যন্ত দুই ভাগে ১২১ কিলোমিটারের দুটি পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন সম্পন্ন হয়েছে। তবে আনোয়ারা থেকে ফৌজদার হাট পর্যন্ত ৪২ সেন্টিমিটার ব্যাসের ৩০ কিলোমিটার লাইনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যদিও এলএনজি প্রকল্পের সঙ্গে মিল রেখে ছয় মাস আগেই এই লাইন স্থাপনের কথা ছিল। ওই পাইপলাইনের কারণে আপাতত চট্টগ্রামের বাইরে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কর্ণফুলি নদীর নিচ দিয়ে পাইপলাইন টানতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জিটিসিএল। একবার ভুল পাইপলাইন স্থাপন করে সেটি তুলে এখন নতুন করে পাইপ লাইন বসাতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি।
দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪১০ কোটি ঘনফুট। প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। অর্থাত্ দৈনিক ১৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে।