বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নির্ভর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নির্ভর করছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অতীতে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে। উন্নয়ন নীতিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম।
রোববার সিরডাপ মিলনায়তনে পাক্ষিক পত্রিকা এনার্জি এ- পাওয়ার আয়োজিত ‘২০৩০ সালের জ্বালানি চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা একথা বলেন। পত্রিকার ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা বক্তৃতা করেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিদ্যুৎ জ্বালানি বিষয়ক বিশেষ সহকারি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম তার প্রবন্ধে বলেন, নীতিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। নীতি নীতির মত চলতে দেয়া উচিত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে যত পরিকল্পনা করা হয়েছে তার ৫০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০৩০ পর্যন্ত যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা বাস্তব সম্মত নয়।  তিনি বলেন, শহরে দেশের ৩৩ ভাগ মানুষ থাকে। কিন্তু ৬৯ ভাগ জ্বালানি ব্যবহার করে। অথচ গ্রামে ৬৭ ভাগ মানুষ থাকলেও মোট জ্বালানির মাত্র ৩৩ ভাগ ব্যবহার করে। এটা বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করতে হবে। শহর ও গ্রামের মধ্যে জ্বালানি ব্যবহারের সমন্বয় করতে হবে। তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গ্যাস থাকলেও কূপের চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমে যাবে। অন্য এক প্রবন্ধে এনার্জি এন্ড পাওয়ার এর কন্ট্রিবিউটর এডিটর প্রকৌশলী খন্দকার এম সালেক সুফি বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বিনিয়োগ, জ্বালানি সরবরাহ, পরিবেশ সম্মত প্রকল্প নেয়া, সামাজিক অবস্থা এবং দাম সমন্বয় করা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামের সাথে সমন্বয় করে বিদ্যুতের দাম নির্ধারন করা উচিত। আগের পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। নতুন প্রস্তাব দেয়ার সময় এসেছে। জ্বালানি নীতি ঠিক করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানির অবস্থা স্পর্শকাতর অবস্থায় আছে, নিরাপত্তাহীনতায় আছে, না কি যথাযথভাবে এগোচ্ছে তা দেখতে হবে। যথাযথভাবেই এগোচ্ছে। তবে পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থা পেতে আরও তিনবছর লাগবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে এগোনো হচ্ছে। অনেক বড় পরিকল্পনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে অনেক পরিকল্পনা করা হয়েছে। চাহিদা মেটাতে দেশের কয়লা এখনই তোলা সম্ভব হবে না। এজন্য আমদানি করা কয়লা দিয়ে প্রয়োজন মেটানো হবে। তিনি বলেন, আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সহজ। এতে বিদ্যুতের দাম কম হবে। তবে তা করতে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে যে অর্থ জমা আছে তা যথাযথভাবে খরচ করতে পারলে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কোন সমস্যা হবে না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, পিডিবি’র পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারে আগ্রহ নেই। বেসরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহ বেশি। এতে জ্বালানি নিরাপত্তা ভারসাম্য হারাতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেই বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিকল্পনা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, কয়লা তোলা নিয়ে রাজনীতি চলছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে কয়লা তোলা যাচ্ছে না। কোন পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হবে সেটা কোন সমস্যা না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের মত নয়। এখানের মাটি উর্বর, ফসলী। ফসলী জমি নষ্ট করা উচিত হবে না।
এনার্জি এন্ড পাওয়ার পত্রিকার সম্পদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন এর সঞ্চালনে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. শওকত আকবর, পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলি মো. মিজানুর রহমান, ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নজরুল হাসান (অব), ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদ সরওয়ার (অব)ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহিম।