মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতি: ৩৬ জনের বিচার শুরু

মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিচার শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইসমাঈল হোসেন শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মহেশখালী উপজেলায় এক হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
২০১৪ সালের নভেম্বরে এই জমির ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা। ওই সময় ২৫টা ‘অস্তিত্বহীন’ চিংড়িঘেরের তথ্য দিয়ে প্রায় ৪৬ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৩২০ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নামে ভুয়া চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। বাকি ২৬ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার ৫ টাকা উত্তোলনের জন্য পাঁচটা চেকও ইস্যু করা হয়।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রুহুল আমিন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ছিলেন।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সঙ্গে থাকছে কয়লা খালাসের বন্দরসহ অন্য অবকাঠামো।

৩৫ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এক হাজার ৪০০ একর ভূমি।

২০১৪ সালের নভেম্বরে জমি অধিগ্রহণে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রকল্প পরিচালকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা একেএম কায়সারুল ইসলাম। কক্সবাজার বিশেষ জজ আদালতে এই মামলা করা হয়।

সাবেক জেলা প্রশাসক ছাড়াও মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) জাফর আলম, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া, রকিবুল আলম, জেলা মৎস কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান ও কৃষক সেজে ক্ষতিপূরণ নেয়া কিছু চিংড়ি ব্যবসায়ী।

অভিযোগে বলা হয়, মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। প্রকল্পর জন্য এক হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়। এই ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা মূল্যায়নেই শুরু হয় অনিয়ম। দ্বীপের চিংড়ি প্রকল্পের মালিকদের নানাভাবে প্রলোভন দিয়ে ভুয়া কাগজ তৈরি করে
মঃস্য কর্মকর্তাদের দিয়ে ‘অবাস্তব প্রতিবেদন করে নেয়া হয় টাকা। চিংড়ি প্রকল্পের প্রতি কেজি চিংড়ির মূল্য ৮০০ টাকা হিসাবে প্রতি চিংড়ি প্রকল্পে চিংড়ির মজুদ দেখানো হয় অস্বাভাবিক হারে। আর মৎস্য বিভাগ থেকে এ রকম অবাস্তব প্রতিবেদনের ফলে চিংড়ি প্রকল্পে যেখানে ১ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ হওয়ার কথা, সেখানে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। চক্রটি নিজেদের কোনো জমি ও চিংড়ি প্রকল্প না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ টাকা নিয়েছে।

মামলার পর আদালতের আদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩রা এপ্রিল রুহুল আমিনসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা ক্ষতিপূরণের নামে ভুয়া চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকসহ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন তারা।
অন্যদিকে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২১ জন ভুয়া চিংড়িচাষীর বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করা হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে। পরে অবশ্য এ সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এসব মামলায় ভুয়া চাষী বানিয়ে ২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।