মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিরল জাপান

গুলশানের হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর থমকে যাওয়া মাতারবাড়ি বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পে গতি ফিরে এসেছে। কেন্দ্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ফিরে এসেছে জাপানের দুইটি বড় কোম্পানি। নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস পর কেন্দ্রটি নির্মাণে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন ও মারুবিনি করপোরেশন। এর ফলে চলতি বছরই দেশের অন্যতম বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিতব্য এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রটির মালিক ও তত্ত্বাবধায়ক কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (সিপিজিসিবিএল)। গত বছরের ২৬ জুলাই ছিল কেন্দ্রটি নির্মাণে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ১ জুলাই গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন জাপানি কোম্পানি ও প্রকৌশলীরা            এ দেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তি জানায়। দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমেও প্রকল্পটি থেকে জাপানি সংস্থা ও কোম্পানির মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সংবাদ প্রকাশ পায়। পরে সরকার তাদেরকে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপরও তারা আরএফপি জমা দেয়ার সময়সীমা কয়েক দফায় বাড়িয়ে নেয়। এটি জমা দেওয়ার সময়সীমা দুই দফায় ৫ মাস বাড়িয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। ঐ সময় জাপানের মারুবিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে আরএফপি দিতে রাজি হলেও সুমিতমো আরো সময় বৃদ্ধির অনুরোধ করে। এরপর সরকার আরেক দফায় সময় বাড়ানোর পর গতকাল মঙ্গলবার পৃথকভাবে দরপ্রস্তাব জমা দেয় সুমিতমো করপোরেশন ও মারুবিনি করপোরেশন।

এ প্রসঙ্গে সিপিজিসিবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কাশেম বলেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুেকন্দ্রটি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার দেয়া প্রকল্প। কিন্তু গুলশান হামলার পর প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়ার কাজ বেশ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। আজ (গতকাল) সুমিতোমো এবং মারুবিনি পৃথকভাবে দরপত্র জমা দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি অনেকটা এগিয়ে গেল। আগামী মে মাসের মধ্যেই এ দুইটির মধ্যে যে কোনো একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, মাতারবাড়িতে  আমদানিকৃত কয়লা থেকে বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় সরকার। জাইকার সহযোগিতায় ওই দেশেরই টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানি ও টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি ২০১৪ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এরপর কেন্দ্রটি নির্মাণে আগ্রহপত্র জমা দেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে মারুবিনি ও সুমিতমোকে বেছে নিয়ে ছোট তালিকা তৈরি করা হয়। কিন্তু দুই কোম্পানিই গুলশান হামলার পর পিছিয়ে গেলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

সিপিজিসিবিএল সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিবে ২৯ হাজার কোটি টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে। অবশিষ্ট দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা কেন্দ্রটির মালিক ও বাস্তবায়নকারী কোম্পানি সিপিজিসিবিএল দিবে।

প্রকল্পটির আওতায় ১৫ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৪ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, মূল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কারিগরি কাজ, পূর্ত কর্ম, কেন্দ্র এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ, স্থায়ী টাউনশিপ নির্মাণ, ফ্লু গ্যাস ডি-সালফারাইজেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এছাড়াও কয়লা পরিবহন ব্যবস্থা, কয়লা খালাসের জন্য পৃথক জেটি নির্মাণ, কয়লা মজুতের জন্য সংরক্ষাণাগার নির্মাণের কথা রয়েছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া অন্য কাজগুলোতে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি নেই।

সরকার বর্তমানে ২৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনে কাজ করছে। এর মধ্যে সাতটি সরকারি, আটটি বেসরকারি ও আটটি বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গৃহীত প্রকল্প। এই নির্মিতব্য কেন্দ্রগুলোর মোট উত্পাদনক্ষমতা ২০ হাজার ৬২২ মেগাওয়াট। এগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুেকন্দ্রটি দ্রুততম সময়ে নির্মাণ সম্পন্ন করার আশা করছিলেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু নির্মাণ ঠিকাদার বাছাই প্রক্রিয়াতে অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ করা যাবে না বলে মনে করছেন তারা।