৪০ মন্ত্রণালয়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১৩৬৪ কোটি টাকা

বিদ্যুতের বকেয়া থেকেই যাচ্ছে। দিনে দিনে এ বকেয়ার পরিমান বাড়ছেই। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানই সবচেয়ে বেশি খেলাপি। ৪০টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কাছে বকেয়ার পরিমান এক হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলো বারবার তাগাদা দিয়েও বিল আদায় করতে পারছে না। ফলে বকেয়া অর্থের পরিমাণও বেড়ে চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠানকে বহুবার তাগাদা-চিঠি দেওয়ার পর কিছু অর্থ পাওয়া গেলেও বাকি অর্থ কবে নাগাদ শোধ করা হবে তা অনিশ্চিত।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে ছয়টি বিতরণ সংস্থা-কোম্পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ এক হাজার ৩৬৪ কোটি সাত লাখ ৬৫ হাজার টাকা। গত বছর এ বকেয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে বকেয়ার পরিমাণ এক হাজার ৩৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া এখন তেমন নেই। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বকেয়া অনেক। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে বরাদ্দ পায় তাতে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেরও অর্থ থাকে। কিন্তু তারা পরিশোধ করছে না। তিনি বলেন, বকেয়া বিল আদায়ে এখন বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারের কাছে নতুন প্রস্তাব দেবে। সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎসেবা বাবদ যে বরাদ্দ সরকার দেবে তা অন্যখাতে যেন তারা ব্যবহার করতে না পারে সে প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বকেয়া আদায়ে গতি আসবে।

কোন্ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া কত

সবচেয়ে বেশি বিল খেলাপ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সরকারের এ বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৬৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির কাছে পিডিবির পাওনা ১৭০ কোটি ও ডিপিডিসির পাওনা ২৭০ কোটিরও বেশি। বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাড়ে ৯৬ কোটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৪৫ কোটি ২৩ লাখ, জননিরাপত্তা বিভাগের ৩৯ কোটি ৩১ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ৩৬ কোটি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ৩৬ কোটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৬ কোটি ৩৫ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২২ কোটি ৫৩ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২১ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন খোদ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকেও পাওনা রয়েছে ১৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বকেয়া বিদ্যুত্ বিল বাবদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পৌনে ১৩ কোটি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১১ কোটি ৭০ লাখ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ১০ কোটি ৩০ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ১০ কোটি ৩১ লাখ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৮ কোটি ৩৪ লাখ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ৮ কোটি ১৩ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ, সড়ক পরিবহন বিভাগ থেকে ৭ কোটি ৯৫ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পাবে বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলো।

বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কাছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায় ৭ কোটি ৩৩ লাখ, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৭ কোটি ২২ লাখ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৬ কোটি ৩১ লাখ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩ কোটি ৮৮ লাখ, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৩ কোটি, সুরক্ষা সেবা বিভাগের ৩ কোটি ৯১ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের ২ কোটি ৮৪ লাখ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৌনে ৩ কোটি, অর্থ বিভাগের ২ কোটি ৩৪ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিল খেলাপের পরিমাণ ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ১ কোটি ৩৮ লাখ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি ৩৬ লাখ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ১ কোটি ৩৫ লাখ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি ১৪ লাখ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ১ কোটি টাকার বেশি বকেয়া বিল রয়েছে।

বিতরণ কোম্পানির বকেয়ার পরিমান
বর্তমানে দেশে ছয়টি সংস্থা-কোম্পানি বিদ্যুৎ বিতরণ করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি)। ৪৯১ কোটি টাকারও বেশি বিল খেলাপী কোম্পানির সরকারি গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) বকেয়া ১২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৪৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ১১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং নবগঠিত নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নওজোপাডিকো) ২১৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। গত বছর নওজোপাডিকো যাত্রা শুরু করলেও পিডিবির আওতাধীন এলাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটি ওই এলাকায় পিডিবির বিলখেলাপের অর্থ আদায়ের দায়িত্বও গ্রহণ করেছে।