বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিতে সম্মত ভূটান

আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বাংলাদেশ ও ভুটান। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে এ ঐকমত্য পোষণ করেন। এছাড়া বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং ঢাকায় থিম্পুর দূতাবাস নির্মাণে প্লট বরাদ্দে দুটি প্রটোকল সই হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে সই হওয়া এ প্রটোকল অনুয়ায়ী আন্তঃবাণিজ্যে ৯০টি পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা
পাবে ঢাকা ও থিম্পু। পাশাপাশি চুক্তির আওতায় ঢাকায় দূতাবাস নির্মাণে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় ভুটানকে বিনামূল্যে প্লট দেয়া হবে।
ভুটান আগেই বাংলাদেশকে বিনামূল্যে দূতাবাস নির্মাণে জমি বরাদ্দ দেয়ার প্রতিদান হিসেবে বাংলাদেশও দেশটির দূতাবাস নির্মাণে প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব শামীম চৌধুরী জানান, শীর্ষ বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বশীল ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
শামীম চৌধুরী বলেন, দুই নেতার আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে উঠে আসে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক। তারা একমত হন, দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধাই রাখা হবে না।
শামীম চৌধুরী বলেন, দুই নেতার আলোচনায় আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে ভারতের কাছে তাদের পক্ষ থেকে দাবি তোলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ট্রানজিটের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চলছে, ভুটান এতে যোগ দিলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আনা সম্ভব হবে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এই পার্থক্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তাদের আন্তরিকতার কথা ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, সিরামিকস, ওষুধ, প্রসাধনী, রাসায়নিক ও মৌসুমি সবজি আমদানি করতে ভুটানকে আহ্বান জানান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীও এতে ইতিবাচক সাড়া দেন। বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে চিকিৎসক নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রমুখ। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নরভু ওয়াংচুক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিনজিন দর্জি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সোনম তোবডেন রাবগি, প্রধান আরবান ডিজাইনার তাশি পেনজর।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের উপস্থিতিতে শনিবার বিকেলে দুই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং ভুটানের অর্থমন্ত্রী নরভু ওয়াংচুক বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেন আর ভুটানের দূতাবাসের জন্য রাজধানীর বারিধারায় জমি দেয়ার চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং সফরকারী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিনজিন দর্জি সই করেন।
চুক্তি সইয়ের পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের মধ্যে আগের চুক্তিতে ৭৪টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া ছিল। এখন এই সংখ্যাটি বাড়িয়ে ৯০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন ‘আমরা পদ্মা সেতুর জন্য ভুটান থেকে বোল্ডার আনতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেব। দুই দেশের রফতানি বাড়াতে আমরা যা যা করার করব।