দক্ষিণেও একটা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে: সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ সম্প্রতি পরমানু যুগে প্রবেশ করেছে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অগ্রণি ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। বাংলাদেশে প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এই বিদ্যুৎ দিতে স্থাপন করা হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান করার জন্য জরিপ শুরু করেছে।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পারমাণবিক শক্তির গুরুত্ব, মস্কো ও ঢাকার মধ্যে সহযোগিতার সুযোগসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। নিউক্লিয়ার এশিয়াতে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ অনুবাদ করে এনার্জি বাংলায় প্রকাশ করা হলো।

রাশিয়া ও বাংলাদেশ যৌথভাবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। । প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের অর্থ কী?
আমরা বাংলাদেশের উন্নতি করতে চাই। এজন্য আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন আমার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল। তিনি বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও সমৃদ্ধ দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকে। অবৈধভাবে  মার্শাল জারি করা হয়েছিল। যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা জনগণের সম্পর্কে তোয়াক্কা করত না।
কিন্তু, আমি আমার পিতার ইচ্ছা জানি। যখন তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন আমার বোন ও আমাকে বাড়িতে ফিরতে দেয়া হয়নি। আমরা একটি বিদেশী দেশে বসবাস করতাম। যখন পার্টি আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল এবং জনগণের কাছ থেকে অসাধারণ সমর্থন পেয়েছি, তখন আমি বাড়ি ফিরলাম। তারপর থেকে আমি দারিদ্রের কারণ জানতে ও মানুষ কিভাবে কষ্ট পাচ্ছিল তা জানতে বাংলাদেশ জুড়ে প্রচুর সফর করেছি। তারপর, আমরা একটি অর্থনৈতিক নীতি তৈরি করলাম। আমি দেখেছি যে জনগণের জন্য বিদ্যুত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য, আশ্রয়, গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অর্থনীতিতে উন্নতির জন্য বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজন।
১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ¶মতা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এবং মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করত। তখন থেকেই আমরা বেসরকারী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করি। সংসদে একটি আইন পাস করি এবং বেসরকারীখাতে বিদেশী বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দি। এই সিদ্ধান্তে মাত্র পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।
পূর্বপাকিস্তানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯৬১ সালে। দুর্ভাগ্যবশত, তারা (পশ্চিম পাকিস্তান) সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি। মুক্তিযুদ্ধের পর আমার পিতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।  আপনি জানেন যে, দেশ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে এবং এটি সহজ ছিল না। আমার পিতার হত্যাকাণ্ডের পর যারা ¶মতায় আসে তারা কিছুই করেনি। ফলে আমি উদ্যোগ নিলাম এই বিদ্যুৎকেন্ত্র স্থাপনের জন্য। এজন্য রাশিয়ান সরকারকে ধন্যবাদ জানায়, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ, তিনি আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। যখন রাশিয়া গিয়েছিলাম তখন আমি তাদের কাছে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার ব্যাপারে আমার ইচ্ছার কথা বললাম। কারণ আমাদের ইতোমধ্যে জমি ঠিক করা ছিল। মি. পুতিন আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি আর্থিক, প্রযুক্তি ও অন্যান্য সব সহায়তা দেবেন। আপনি এটা জানেন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা খুব জটিল।
আমার প্রথম মেয়াদে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছি। এখন এটি সম্ভব  হয়েছে।  এখন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সময় এসেছে। উন্নয়নের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে যেন প্রতিটি পরিবার বিদ্যুৎ পায়। তাদের উচিত একটি মানসম্মত জীবন যাপন করা। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হলে জনগণের চাকরির সুযোগ হয়। এ জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। যদিও আমাদের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি, কিন্তু শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য, সব প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করার জন্য বিদ্যুৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের রপ্তানি বাড়াতে চাই, আমরা গ্রামীণ জনগণের জীবনকে উন্নত করতে চাই।
অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহ করছে। তারপরও এখন কেন পারমাণবিক বিদ্যুৎ এত আকর্ষণীয়?
আমি মনে করি, নতুন প্রযুক্তির কারণে এটি খুবই নিরাপদ এবং খুব সস্তা। আমরা গ্যাস, কয়লা এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এই সময়ে  ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার। কারণ আমাদের জনগণের ক্রয় ¶মতা বাড়ছে, চাহিদা আরো বাড়ছে। এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ খুবই দক্ষ, সস্তা এবং পরিবেশ সম্মত। তাই এটি প্রত্যেক দেশের জন্য আকর্ষণীয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরমানু ব্যবহারে একেবারে নতুন নয়। শান্তিপূর্ণভাবে অনেকদিন থেকেই পরমাণু ব্যবহার করছে বাংরাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তা খুব সাফল্যের সাথে পরমাণু ব্যবহার করেছে। আমরা চিকিৎসা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরমাণু ব্যবহার করছি। মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এটাও কী রাশিয়ার সহযোগতায় হবে?
দীর্ঘদিন আগে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল, এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন সন্তোষজনক উন্নয়ন হয়নি। আগের প্রত্যেক সরকার এই এলাকাকে অবহেলা করেছে। কিন্তু আমি জানি যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এই অঞ্চল সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত । ফলে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে তাদের অর্থনৈতিকভাবেও তারা বিকাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা উচিত …। আসলে আমি দক্ষিণ অংশ থেকে আছি, তাই এর উপলব্ধিটা বেশি বুঝতে পারছি।
সুতরাং, হ্যাঁ আমরা একটি জমি খুঁজছি। কে এই কেন্দ্র করতে আমাদের অংশীদার হবে তা নির্ভর করছে তাদের প্রস্তাবের উপর। আমি কাউকে কথা দিতে পারবো না। কারণ এখানে প্রতিযোগিতা আছে। যারা আমাদের ভাল প্রস্তাব দেবে আমরা তাদের সাথেই যাবো। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রূপপুরের মতো রাশিয়া যদি অর্থ এবং সবকিছু দেয় তবে রাশিয়ার সাথেও অংশীদার হওয়া যেতে পারে। কিন্তু, অন্য দেশ যদি আমাদের আরও ভাল প্রস্তাব দেয় তাহলে আমরা সেই প্রস্তাবও বিবেচনা করব। রাশিয়া আমাদের বন্ধু। আমরা মনে করি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিলো। আমাদের কাছে তাদের জন্য একটি বিশেষ জায়গা আছে, এবং রাশিয়া আমাদের বিশেষ বন্ধু।
বাংলাদেশ কি রাশিয়ার সাথে অন্য কোনও প্রকল্পে কাজ করতে চায়? বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার কোন অংশ সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল?
প্রকৃতপক্ষে আমরা গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়েছি। রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনায় আছি। এখানে একটা দল আছে যারা গ্যাস রপ্তানি করতে চায়। কিন্তু এজন্য অনেক অনুসন্ধান প্রয়োজন। ১৯৭৫ সালের পর এই খাতের যতœ নেয়া হয়নি, তাই এখন আমরা এটি করছি। রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে এছাড়াও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা করছে। এছাড়াও অনেক এলাকা আছে যেখাতে আমরা সহযোগিতা করতে পারি। সেগুলো আমরা দেখছি। আমরা রাশিয়া থেকে গমসহ অন্যান্য জিনিসও আমদানি করতে পারি।
দক্ষিণ এশীয়ার দেশ হিসেবে ভারত মহাসাগরের অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে কী চিন্তা করছেন?  বিশেষজ্ঞরা এই অঞ্চলের সামরিকীকরণ সম্পর্কে কথা বলছে। আপনি এ সম্পর্কে কি মনে করেন?
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিদেশী নীতি খুব স্পষ্ট, সবার সাথে বন্ধুত্ব। আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট, যদি কোন  সমস্যা হয় তবে দ্বিপক্ষীয় বা বহুজাতিকভাবে আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। আমরা একটি অবস্থান গ্রহণ করেছি যে যদি দুই দেশের সমস্যা থাকে তবে তাদের অবশ্যই আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। এই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে খুবই শান্তিপূর্ণ, যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার একটি খুব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এটি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন করা। আমরা সে দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন? বিমসটেকের অগ্রগতি এবং সার্কের ভবিষ্যৎ কী হবে?
অবশ্যই ভবিষ্যত ভাল। কিন্তু কখনও কখনও সমস্যা আসতে পারে তবে তা উতরে যেতে হবে। সে সব সমস্যা উতরে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। জনগণের জন্য আমরা প্রধানত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বলতে পারি না ভবিষ্যত খুব অন্ধকার। আমি বলি ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। স্পষ্টতই আমাদের উন্নয়ন দক্ষিণ এশিয়ায় অবদান রাখবে। উন্নয়নের জন্য একে অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে আন্তঃসংযোগ হয়েছে। তারপর অন্য অংশে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে আন্তঃসংযোগ করতে আমরা একমত। এ অঞ্চলে আমরা অর্থনৈতিক করিডোর স্থাপন করেছি। এখন রেল এবং সড়ক যোগাযোগ করতে চাই।  এটি আমাদের বাণিজ্য, ব্যবসায় সমৃদ্ধি আনবে। এই পথে আমরা রাশিয়াও যেতে পারি।

এজন্য কী আপনি চীন এর এক বেল্ট এক রোড প্রকল্পের পক্ষে?
আমি বহুপাক্ষিক। শুধু চীনেই নয়, সবাই এতে উপকৃত হবে। কারণ যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সন্ত্রাসবাদ এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য রাশিয়া ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কী কিছু করতে পারে?
মানব পাচার, মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসবাদ কেবল বাংলাদেশের  সমস্যা নয়। এটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। প্রতিটি দেশের একমত হতে হবে যে আমরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অনুমতি দেব না। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমি সবসময় উত্থাপন করি সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম বা সীমানা নেই। সন্ত্রাসবাদ তাদের ব্যবসায়। আসলে আমরা কিভাবে এই থামাতে পারেন? যদি অর্থের উৎস বন্ধ করতে পারেন, অস্ত্রের উৎস বন্ধ করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ মোকাবেলা করতে পারেন। বাংলাদেশে, আমরা খুব দৃঢ় অবস্থান নিয়েছি। এই কাজে যে কেউ সহায়তা করলে আমরা সেটা গ্রহণ করব। এছাড়াও, আমাদের আইন প্রয়োগকারী এজেন্সি এবং  গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষণে সহায়তা প্রয়োজন। রাশিয়া আমাদের একাজে সহায়তা করতে পারে। অবশ্যই অন্যান্য দেশ আমাদের সাহায্য করছে।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক সমস্যা সম্পর্কে আপনি কি ভাবছেন?
আপনি জানেন  রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। অত্যাচারের কারণে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে চলে এসেছে। মানবিক কারণে আমরা তাদের আসতে এবং আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, কারণ তারা তাদের নাগরিক। তাই, আমি চাই রাশিয়াকে একটি স্ট্যান্ড নিতে হবে এবং মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিতে হবে। এরা শরণার্থী ক্যাম্পে অমানবিকভাবে বসবাস করছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পালিয়ে আসার সময় তারা তাদের বাবা-ম কে হারিয়েছে। বাংলাদেশে এখন ১৬ কোটি মানুষ আছে। এখন নতুন করে এটা আমাদের জন্য বোঝা। কিন্তু আমি আমার লোককে বলেছিলাম যে খাবার আছে, তা আমরা ভাগ করে খাব। কিন্তু কতদিন এভাবে বেঁচে থাকতে পারবে? শিশুদের স্কুলে যেতে হবে, তাদের ভালো জীবন ও নিজ¯^ বাড়ি দরকার। এক সময় আমার বোন এবং আমি শরনার্থী ছিলাম।  শরণার্থী হওয়ার দুঃখ এবং ব্যথা আমি জানি। এ কারণে, আমি চাই রাশিয়া একটা অবস্থান নিক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের সময় এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় রাশিয়া ও বাংলাদেশ ভালো বন্ধু ছিল। এখন কী সেই সম্পর্কে কোন পরিবর্তন এসেছে?
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময় নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। সবাই জানে পরিস্থিতিটি কী ছিল। কিন্তু যেহেতু আমি এখন সরকাকারে আছি তাই স্পষ্টতই বলতে পারি, আমাদের রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। আমরা অর্থনীতির মতো অনেক অঞ্চলে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। এটা সেরা  সময়। আমরা ১৯৭৫ সালের আগেই আমাদের বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা আশা করি রাশিয়ার সাথে আমাদের বন্ধুত্ব অব্যাহত থাকবে।
আপনি কি রাশিয়া পরিদর্শন করেছেন? রাশিয়ার কোন বিষয়টা আপনি পছন্দ করেন?
আমি মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ পরিদর্শন করেছি।  এটা ডিসেম্বর ১৯৮২ সালের কথা। তখন খুব ঠাণ্ড ছিল। অন্যথায় সেটা খুব ভালো ছিল। আর সেখানের মানুষ সত্যিই খুব ভালো। পরে আবার, আমি ১৯৮৭-৮৮ সালে ফিরে চেকস্লোভাকিয়া গিয়েছিলাম। এটা সুন্দর দেশ। আমরা সেটা উপভোগ করেছি।
১৯৯১ সাল থেকে, রাশিয়ায় কোন নারী নেতা নেই। বিশেষ করে ইসলামিক দেশে নারী হয়েও একজন নেতা হওয়া কী কঠিন?
আসলে আমি স্কুলে পড়ার সময় থেকে রাজনীতিতে খুব আগ্রহী ছিলাম। আমার কলেজ জীবনেও আমি রাজনীতিতে খুব সক্রিয় ছিলাম। আমার  জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিবারেই হয়েছিল। আমার জন্য এটা কঠিন ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনার লোকজন আপনাকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করে কিনা, তা। ১৯৮১ সাল থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। আমি কিছু হতে চাই না। রাজনীতিতে জনগণের সেবাই একমাত্র কাজ। আমি যখন দেশে ফিরে আসি, তখন আমি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি ঠিকই কিন্তু সেটা ভিন্ন সমস্যা। সেটা লিঙ্গ সম্পর্কিত সমস্যা নয়। যারা ক্ষমতায় ছিল সেই সময় তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে নি। সেই সময় যুদ্ধাপরাধীদের অধিকাংশই সরকারে ছিল। তারপর আমার বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। আমি আমার পুরো পরিবার হারিয়েছি, কিন্তু ন্যায় বিচারের জন্য মামলা করার অধিকার পর্যন্ত পায়নি। যারা হত্যাকারী তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে এবং অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিল।  এতে আমি বাধা এবং হুমকির সম্মুখীন হই। সব মিডিয়া ও স্বৈরশাসকরা  আমার বিরুদ্ধে ছিল। তাই প্রতিটি ধাপে আমি কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন্তু আমার লোকেরা আমাকে গ্রহণ করেছিল। তারা আমাকে একজন নারী হওয়ায় কোন সমস্যা মনে করেনি।
জামায়াত-ই-ইসলামীর মতো কিছু সংগঠন, তারা কখনো কখনো এই প্রশ্ন উত্থাপন করে যে এই দেশে একজন নারী নেতা হতে পারে না। কিন্তু আমি জনগণের সমর্থন পেয়েছি। আমার দল খুবই শক্তিশালী। আমি আমাদের জনগণের সমস্যা বুঝতে এবং আমাদের দেশের বিকাশ কিভাবে করতে হবে তা বুঝতে অনেক সফর করেছি। আমি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অভ্যস্ত, আমি জানি কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এটা আমার জন্য খুব সহজ ছিল, কারণ মানুষ আমাকে সমর্থন করেছিল। আমি সবসময় তাদের স্নেহ ভোগ করেছি। যেহেতু আমি আমার পরিবার হারিয়েছি সে জন্য জনগণের কাছ থেকে অনেক স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি। জনগণ আমার সবচেয়ে শক্তি।
আপনি রাশিয়ার মানুষকে কিছু বলতে চান?
রাশিয়ার মানুষ আমাদের দূরবর্তী বন্ধু এবং এই বন্ধুত্ব অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বন্ধুতর আরও এগিয়ে যাবে।