ইজিবাইকের জন্য ছয়টি সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে

সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে ইজিবাইক চার্জ করতে দেশের সাতটি বিভাগীর শহরে সোলার চার্জিং স্টেশন করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জে একটি স্টেশনের উদ্বোধন করা হয়েছে। আরো ৩টি স্টেশন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো শুরু হয়েছে। খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় সংস্থা বা কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে এসব চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ৩টি, ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১টি, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) ১ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১টি সোলার চার্জিং স্টেশন করবে।
আরইবি কেরানীগঞ্জে ইজিবাইকের চার্জ স্টেশন করেছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সেটি উদ্বোধন করা হয়। কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে মেসার্স সানি ফিলিং স্টেশনের ছাদে এক হাজার ৪৩০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে ২১ কিলোওয়াট ক্ষমতার সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এটি সরকারের একটি পাইলট প্রকল্প। এ প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই স্টেশনে একই সময়ে ২০/২৫টি ইজিবাইক চার্জ দেয়া যায়। ইজিবাইক প্রতিবার চার্জ দিতে ৫০ টাকা ও রিকশা ব্যাটারি চার্জ দিতে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া পিডিবি চট্টগ্রামে ২টি ও সিলেটে একটি স্টেশন স্থাপন করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বিদ্যুৎ ভবনে ২০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা ক্ষমতার দুটি স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্যদিকে সিলেটে শেখঘাট এলাকায় বিপিডিবির কার্যালয় প্রাঙ্গণে ২০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা ক্ষমতার একটি সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনটি স্টেশনই পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে।
ডেসকো ঢাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি সোলার চার্জিং স্টেশন করবে। এর মধ্যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সমীক্ষার কাজ চলছে। ডিপিডিসিও ১টি স্টেশন করবে। তারা সবেমাত্র প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। এখন সমীক্ষার কাজ চলছে।
বেশিরভাগ জায়গায় চোরাই লাইনের মাধ্যমে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চার্জ দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১১ কেভি লাইন থেকে সরাসরি সংযোগ নিয়ে ব্যাটারি চার্জ দেয়া হচ্ছে। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। একটি ইজিবাইকের পাঁচটি ব্যাটারি ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা ধরে এবং অটোরিকশার চারটি ব্যাটারি চার্জ দিতে হয় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এতে বিদ্যুৎ চুরি যেমন হচ্ছে তেমনি বিদ্যুতের অপচয়ও হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই সরকার সৌরবিদ্যুৎ চার্জিং স্টেশন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, টাইম লাইন ঠিক করে প্রকল্প হাতে নেয়া দরকার। বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে চুক্তি বাতিল করে দিতে হবে। অন্যথায় জরিমানা গুনতে হবে ঠিকাদারকে। তিনি বলেন, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে গ্রিডে বিদ্যুৎ দেয়ার ক্ষেত্রে মেয়রদেরকেও যুক্ত করতে হবে। নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য উৎস হতে ৪৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ৫ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম বর্তমানে ব্যবহƒত হচ্ছে। সোলার রুফটপ, সোলার ইরিগেশন, সোলার মিনি গ্রিড, সোলার চার্জিং স্টেশন এবং বায়োগ্যাস বা বায়োম্যাশ প্রসারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাময় উৎসকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ৭০০ মেগাওয়াট এবং বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে।