একবছরে অন্তত ২০ভাগ দুর্নীতি কমান- প্রতিমন্ত্রী

আগামী এক বছরের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতে অন্তত ২০ভাগ দুর্নীতি কমানোর চ্যালেঞ্জ নিতে বললেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
পল্লী বিদ্যুতে নতুন সংযোগ নিতে গ্রাহকদের ঘুষ দিতে হচ্ছে। এমন কি এখন বিকাশের মাধ্যমেও ঘুষ নেয়া হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে হবে বলে প্রতিমন্ত্রী পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপকদের প্রতি অনুরোধ করলেন।
শনিবার রাজধানির খিলক্ষেেত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) প্রধান কার্যালয়ে পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কথা বলেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। এসময় আইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈনউদ্দিন ও সদস্য প্রশাসন মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের দ্বিতীয়  অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চেয়ারম্যান কে এম হাসান। সম্মেলনে আরইবি সমিতির সকল মহাব্যবস্থাপক ও বোর্ডের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরইবি সমিতিতে দুর্নীতি আছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য গ্রাহকদের টাকা দিতে হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আগামী এক বছরে অন্তত ২০ ভাগ দুর্নীতি কমানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এজন্য কর্মকর্তাদের আরও সজাগ হতে হবে। তিনি বলেন, একবছর পর শুনতে চাই আরইবিতে পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতি কিছুটা কমেছে। সমিতিগুলোতে সংযোগ পেতে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দেয়ার খবর আছে। একটি দালাল চক্র আছে, ইলেকট্রিশিয়ান আছে। তারাই এগুলো করছে। ইলেট্রিশিয়ানদের বিদায় করে দিতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি কমাতে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রত্যেক বিভাগে অটোমেশন করা হবে। এজন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
একবারে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের (লাইফলাইন) দাম বাড়ানো হবে না বলে তিনি জানান। বলেন, এখনও ৭০ ভাগ গ্রাহক লাইফলাইনের নিচে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তাদের জন্য ভর্তূকি দিয়ে যেতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই ভর্তূকি বন্ধ করা হবে। তবে আরও কিছুদিন ভর্তূকি দিয়ে যেতে হবে। ভর্তূকি যা দেয়া হয় তার থেকেও অনেক বেশি অন্য দিক দিয়ে আয় হয়। কৃষিতে ভর্তূকির কারণে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু এতে ১২ হাজার কোটি টাকা উঠে আসে। যত দ্রুত ভর্তূকি তুলে দেয়া যাবে তত দ্রুত বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হবে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও এখনই দেশে কমানো হবে না বলে তিনি জানান। বলেন, বিপিসি বা সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানই লাভ করবে তা হবে না। তা করাও হবে না। তবে বিপিসির পুঞ্জিভুত লোকসান আছে। তা কাটিয়ে উঠতে এখনই তেলের দাম সমন্বয় করা হবে না। আগামী তিন বছর পর বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেরাই বাজেটের অর্থ জোগান দেয়ার মত স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অর্থায়ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থনৈতিক পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর সীমানা নির্ধারণ দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হবে বলে তিনি জানান।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আরইবিতে আসলে মনে হয় যেন দুদকের অফিস। চারদিকে দুর্নীতি বিরোধী পোস্টারে ভরা। শুধু পোস্টার রাখলে হবে না। পোস্টার বাদ দিয়ে নিজেরাই সংশোধন হয়ে ভালভাবে চলতে হবে। আরইবি চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন মহাব্যবস্থাপকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে কাজ করতে হবে।  বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। নতুন সংযোগ নিতে নানা উপায়ে টাকা নেয়া হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ছিটমহল এলাকায় সাত হাজার ৮০০ পরিবারকে আগামী এক বছরের মধ্যে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়া হবে। এজন্য এক হাজার একশ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন করা হচ্ছে।
সম্মেলন মহাব্যবস্থাপকরা লাইফলাইন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, সরবরাহ কোম্পানিগুলোর সীমানা দ্রুত নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন।
সম্মেলনের শুরুতে জানানো হয়, আরইবিতে বর্তমানে ৭৭টি সমিতি আছে। মোট গ্রাহক আছে এক কোটি ২১ লাখ। বিদ্যুতের চাহিদা চার হাজার মেগাওয়াট। ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ পদ্ধতিগত লোকসান।