এলএনজি আমদানিতে শুল্ক মওকুফের প্রস্তাব

জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় এলএনজির দাম প্রায় তিনগুণ বেশি পড়বে। তাই এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মওকুফের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে এলএনজি আমদানি পরবর্তী গ্যাসের মূল্য নির্ধারনের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পেট্রোবাংলা প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সম পরিমাণ এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করেছে। এজন্য মহেশখালীতে একটি এলএনজি টার্মিনাল ও রি-গ্যাসিফিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। অন্যদেক কাতারের রাসগ্যাসের কাছ থেকে আনা হবে এলএনজি। এই গ্যাস সাগর থেকে স্থলভাগে আনতে এরইমধ্যে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে।
টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। যা দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে ৬ দিন গ্যাস  সরবরাহ করা যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জাহাজের মাধ্যমে এলএনজির একটি চালান আসতে ৭ দিন এবং জাহাজ থেকে টার্মিনালে গ্যাস নিতে দুইদিন সময় লাগবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির আমদানি ব্যয় ৮ ডলার। এ হিসেবে প্রতি চালানে ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করতে ২৪ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এছাড়া পেট্রোবাংলাকে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর সম্পুরক শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হয়। অন্যদিকে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি কাস্টমস শুল্ক দিতে হবে। এ অবস্থায় এলএনজি আমদানি খরচ আরো বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে গ্যাসের দাম। এ অবস্থায় মূল্য নির্ধারনে সরকারের গঠিত কমিটি এলএনজির সম্পুরক শুল্ক ও ভ্যাট মওকুফ করে আমদানি করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক হা পুননির্ধারণ করাও কথাও বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করছে। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হতে পারবে না। তবে সরকার যদি গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে তাহলে গ্যাস সাশ্রয় হবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে গিয়ে এলএনজি খুব বেশি আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের বিক্রয় মূল্য পড়ে ২ ডলার ১৭ সেন্ট। অন্যদিকে প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম ৮ মার্কিন ডলার এবং গ্যাসে রূপান্তরের খরচ হবে ০ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার। এলএনজি আমদানি করতে আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, টার্মিনাল চার্জ, সঞ্চালন চার্জ, বিতরণ চার্জ এবং সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটসহ নানা ধরনের খরচ করতে হয়। এই খরচসহ এলএনজির বিক্রয় মূল্য গিয়ে দাঁড়াবে ২৩ ডলার ১১  সেন্টে। এসডি/ভ্যাট মওকুফ করা হলে এলএনজির দাম হবে ১০ ডলার ৪০ সেন্ট। যা দেশীয় গ্যাসের চেয়ে প্রায় ৮ ডলার বেশি।