এশিয়ায় বাংলাদেশের সৌর বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে বেশি

সৌরবিদ্যুতে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বাংলাদেশে। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডের দ্বিগুণ। বাংলাদেশে যে সৌর প্যানেলের খরচ ১২০ টাকা, ভারতের তার খরচ ৪০ টাকা। অথচ উভয় দেশই সৌর প্যানেল আমদানি এবং নিজেরাও উৎপাদন করে।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ি, দেশে বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট সৌর প্যানেল স্থাপনে ব্যাটারিসহ খরচ এক লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি ওয়াটের দাম ১২০ টাকা। তবে বাজারে এ দামের তিন-চার গুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। সোলার পাওয়ার অ্যান্ড ইলেকট্রিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামে এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোম সিস্টেমসহ প্রতি ওয়াটের দাম রাখা হচ্ছে ৩৭৫ টাকা।

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিসিসসহ (আইইইএফএ) আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে ২৫০ ওয়াটের একটি সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি হয় আট হাজার ৫১৪ রুপিতে। এ হিসাবে প্রতি ওয়াটের দাম পড়ে ৩৪ রুপি বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪১ টাকা। পাকিস্তানে ৪৫০ ওয়াটের জন্য খরচ হয় ৫৩ হাজার রুপি। এ হিসাবে প্রতি ওয়াটের দাম দাঁড়ায় ১১৭ রুপি, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯০ টাকা। এছাড়া থাইল্যান্ডে দেড় হাজার ওয়াটের সৌর প্যানেলের জন্য খরচ হয় ৫৬ হাজার বাথ, ওয়াটপ্রতি যার দাম পড়ে ৩৮ বাথ বা ৮৬ টাকা।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সৌর প্যানেলের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে কাজ করছি। ব্যবসায়ীদেরও এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিক্রি করেন।

বাংলাদেশেও এখন সৌর প্যানেল উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে সাত-আটটি প্রতিষ্ঠান সৌর মডিউল উৎপাদন করছে। পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকে প্রয়োজনীয় মডিউল আমদানি করে। এসব মডিউল রহিমআফরোজ, টিএমএসএসসহ প্রায় ৫৬টি সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। গ্রাহক পর্যায়ে এ প্যানেল স্থাপনে অর্থায়ন সুবিধা দেয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। পরে তা গ্রাহকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুর গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন রাসেল। ২০১০ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ৮৫ ওয়াটের সৌর প্যানেল নেন তিনি। দুই কিস্তিতে ওই প্যানেলের বিপরীতে তাকে শোধ করতে হয় ৪১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ওই প্যানেল কিনতে ওয়াটপ্রতি তাকে খরচ করতে হয়েছে ৪৮৮ টাকা।

স্রেডার সদস্য (জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ) সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, অন্যান্য দেশের যে দাম দেখি, সেটা শুধু মডিউলের। কিন্তু এখানে যে দামটা নেয়া হয়, তা পুরো সিস্টেমের। এ কারণে অন্যদের চেয়ে আমাদের ব্যয়টা বেশি মনে হয়। তাছাড়া দেশে ব্যবহার করা সৌর প্যানেলের বেশির ভাগই এখনো আমদানিনির্ভর। আমদানি করতে গেলে পরিবহন ও অন্যান্য কর যোগ হয়ে খরচ একটু বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া দেশে যারা উৎপাদন করে, তাদেরও বিদেশ থেকে প্রকৌশলী আনতে হয়।

তবে এ উচ্চমূল্যের মধ্যেও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার। স্রেডার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে ৬৫ হাজারের বেশি স্থাপন হচ্ছে। আর প্রতি বছর গড়ে বাড়ছে ৫৮ শতাংশ হারে । এর মাধ্যমে বাসাবাড়িতে প্রতি বছর কেরোসিন সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টন।

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন সক্ষমতা এর দুই দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ৪২৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট ও ১৯৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বা দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।