গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বিরোধিতা গণশুনানিতে

 

আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্তরার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি বিবেচনায় অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির মতো বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বিরোধিতা এসেছে গণশুনানিতে।

ফাইল ছবি ফাইল ছবি বুধবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বাখরাবাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে অংশ নেওয়া সব শ্রেণির ভোক্তা প্রতিনিধিই মূল্যবৃদ্ধি আপাতত স্থগিত রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
বাখরাবাদ গ্যাসের বর্তমান গড় মূল্য ৭ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৯১ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত ২৬ জানুয়ারি বিইআরসিতে মূল্য পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

গড়ে এক হাজার এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি ও এর ব্যয় বিবেচনা করা হয়েছে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবে।

বিইআরসির কারিগরি কমিটির মূল্যায়নে বলা হয়, বর্তমানে ৩২০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমাদানি এবং অদূর ভবিষ্যতে (২০১৯-২০ অর্থবছরে) ৮০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি বিবেচনায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হচ্ছে।

বুধবারের শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাবের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি ভোক্তাদের পক্ষে বলেন, “যে পরিমাণ এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলা হচ্ছে, তা হওয়ার আগেই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনা সম্পূর্ণ বেআইনি।”

সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ালে জনজীবনে এর কতটুকু প্রভাব পড়তে পারে সেই দিকটি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন গবেষণার। যদি মনে হয় দাম বৃদ্ধি করলে সার্বিকভাবে উপকার হবে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু এই দাম বৃদ্ধি গ্রাহক পর্যায়ে প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।”

গণশুনানিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের প্রতিনিধি ফারহান নূর ভূইয়াও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন।

তিনি বলেন, “সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো বর্তমানে ৩২ টাকা প্রতি ঘনমিটার দরে গ্যাসের দাম দিয়ে আসছে। এর ওপর আবারও দাম বৃদ্ধি করাটা এই সেক্টরের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। একটি সেক্টরকে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এমনটি করা হচ্ছে বলে মনে হয়।”

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে শুনানিতে কয়েকজন সাধারণ ভোক্তাও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন।

সকালে গণশুনানি চলাকালে কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবনের বাইরে বিক্ষোভ মিছিল করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

বিতরণ কোম্পনিগুলোর কাছে ভারিত গড় মূল্যহার ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৪ দশমিক ৯১ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সেই হিসাব ধরে নতুন মূল্য প্রস্তাব করেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় গ্যাস সরবরাহ করা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

প্রতিষ্ঠানটি আবেদনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যামের দাম ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা (২০৮ শতাংশ), সার কারখানায় ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা (২১১ শতাংশ), সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা (৫০শতাংশ), ক্যাপটিভ পাওয়ার সংযোগে ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা (৯৬শতাংশ), শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা (১৩২শতাংশ), বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা (৪১শতাংশ), গৃহস্থালিতে সিঙ্গেল বার্নার ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা, ডাবল বার্নার ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।

আবাসিকে মূল্য বৃদ্ধির হার ৮০ শতাংশ। গ্রাহক পর্যায়ে গড় মূল্য বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১৯টি, সারে একটি, শিল্পে ১৬৮টি, সিএনজি স্টেশনে ৯১টি, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৭৮টি, বাণিজ্যিকে ২১৩৯টি এবং আবাসিকে দুই লাখ ৩৮৫৮৯টি গ্রাহক রয়েছে বাখরাবাদের।