গ্যাস সংকট দিয়ে রমজান শুরু: ১৮ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

গ্যাস সংকট দিয়েই শুরু হচ্ছে রমজান। রাজধানী ঢাকাসহ সব এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই কম।
তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে এই সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাসের চাপ খুবই কম। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম চাপে গ্যাস আসছে পাইপে। এজন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক গ্রাহকদের রাতে ছাড়া গ্যাস থাকছে না। রান্না করতে হচ্ছে গভীর রাতে। রাত ১১টার পর থেকে চাপ একটু বাড়তে থাকে। আর ভোর পর্যন্ত সেই চাপ থাক। শুধু গভীর রাতেই স্বাভাবিক চাপে গ্যাস আসে। অন্য সময় গ্যাস থাকলেও তা একেবারেই কম চাপে থাকে।
তিতাস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলা যেখানে স্বাভাবিক সময় গ্যাসের চাপ ছয় পাউন্ড থাকে, সেখানে এখন আছে মাত্র দুই পাউন্ড।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বুধবার ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন ছিল ৩০০ কোটি ঘনফুটের চেয়ে বেশি।
বৃহষ্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮টা বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। আর আগে থেকেই চারটা সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও গ্যাসের সংকট চলছে।

গ্যাস সরবরাহ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, গ্যাস সরবরাহ কম। এজন্য চাপও কম। তবে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যোগ হলে এই সমস্যা থাকবে না। চট্টগ্রামে যখন এলএনজি যোগ হবে তখন পুরো গ্যাস রাজধানী ও এর আশপাশে দেয়া হবে। এলেঙ্গা থেকে সরাসরি রাজধানীতে গ্যাস ঢুকবে। তখন আর এই সমস্যা থাকবেনা আশা করি।

রমজানে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সিএনজি স্টেশন ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেয়া হয়েছে। আগামীকাল রমজান শুরু। সে জন্য আগামীকাল শুক্রবার থেকেই বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকবে। এতে আবাসিক গ্যাসের চাপ একটু বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে ইফতার, তারাবি ও সেহেরির সময় লোডশেডিং না করতে বিতরণ সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে গ্যাস সংকট এভাবে থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। বুধবার বিদ্যুতে ৮৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েই ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তবে বিদ্যুতে এই মুহুর্তে ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনের অর্ধেকের চেয়ে কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থাকলে রমজানে গ্যাসের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকটও দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, এলএনজি জাতীয় গ্রিযে যোগ হওয়ার পর আর গ্যাস সংকট থাকবে না। এজন্য আর অল্প কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া বিদ্যুতের উপাদন যথেষ্ট বেড়েছে। এ মাসে আরও এক হাজার মেগাওয়াট যুক্ত হবে। এবারের রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় অর্থাৎ সন্ধ্যায় রি-রেলিং মিল, ওয়েল্ডিং মেশিন, ওভেন, ইস্ত্রির দোকানসহ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সরঞ্জাম বন্ধ রাখা, ইফতার ও সেহরির সময় বিপণীবিতান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রর ব্যবহার সীমিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সব সময় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।