জঙ্গি হামলার পর থেমে নেই জাইকার বিনিয়োগ

গুলশানের হলি আর্টিজেনে জঙ্গি হামলার পরও বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেমে নেই। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছয়টি প্রকল্পে বাংলাদেশকে প্রায় তের হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে যাচ্ছে জাপান। পাশাপাশি চলতি মাসেই মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে যোগ্য কোম্পানি নির্বাচন চূড়ান্ত করা হবে। সম্প্রতি জাইকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গতবছর জুন মাসে জাইকা মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৩৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার দেয়ার চুক্তি করলেও ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার পর দরপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি প্রথমে স্থগিত করা হয়। পরে দরপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে সাতজনই ছিলেন জাপানি নাগরিক। যারা জাইকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জরিপ কাজে ঢাকায় এসেছিলেন।
এরপর গতবছরের শেষদিকে আবারো মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাপানের সুমিতমো কর্পোরেশন এবং মারুবিনি কর্পোরেশন দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এ বিষয়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী কোম্পানি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম জানান, দরপ্রস্তাব যাচাই বাছাই করে চলতি মাসেই মূল্যায়ন চুড়ান্ত করা হবে। যোগ্য কোম্পানি নির্বাচন করে দ্রুত চুক্তি করা হবে। এরপর পরই কেন্দ্র নির্মাণের মূল কাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোয়াপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বাংলাদেশ কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়িতে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য একটি কয়লা বন্দর নির্মাণ করা হবে।
দরপত্রের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথমে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় দরপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়। এরপর আগ্রহী কোম্পানির অনুরোধে তা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আর দ্বিতীয় সমান ক্ষমতার ৬০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি উৎপাদনে আসবে পরের বছর জুনে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, জাইকার আর্থিক সহায়তায় টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা করে। কিন্তু গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর অনেকটা এগিয়ে থাকা প্রকল্পটিই পিছিয়ে যায়।
এদিকে ঋণের বিষয়ে জাইকা জানায়, গত ২৯ জুন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের ১৭৮ দশমিক ২২৩ বিলিয়ন ইয়েন ঋণের (১ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার) এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। স্বল্প সুদের এই ঋণ শোধ করতে বাংলাদেশ সময় পাবে ৩০ বছর।  রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ১০ বছর অর্থাৎ চুক্তির প্রথম দশ বছর পর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। মাতারবাড়ি ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা, কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ ও বর্তমান সেতু সংস্কার, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট, ঢাকায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং ছোট আকারে পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প।