জলবায়ু বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আহ্বান টিআইবি’র

জলবায়ু বিষয়ক প্রকল্পে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতার কার্যকর জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এছাড়াও এ সংস্থাটির পক্ষ থেকে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় গৃহীত প্রকল্পসমূহে অর্থের ন্যায্য বন্টন এবং স্থানীয় জলবায়ু ঝুঁকি যথাযথভাবে যাচাই করে প্রকল্প অনুমোদন করারও আহবান জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান : প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ আহবান জানানো হয়।
টিআইবি’র ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু তহবিল বরাদ্দে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও তহবিল বরাদ্দ ও ট্রাস্টিবোর্ড গঠনে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এ ঝুঁকি মোকাবেলায় এসব প্রকল্পে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনগণের সম্মতি ছাড়া নিজেদের মতো করে প্রকল্প নিলে তার সফল পাওয়া যাবে না। জনগণের অর্থে পরিচালিত এই তহবিল যেন সুষ্ঠুভাবে এবং কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) এর জন্য তহবিল ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
গবেষণায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও বিভাগের জন্য আট দফা সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা বিবেচনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি; বিসিসিটি ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন; স্থানীয় জলবায়ু ঝুঁকি যথাযথভাবে যাচাই করে প্রকল্প অনুমোদন এবং বিসিসিটি’র সক্ষমতা বৃদ্ধি:নীতিমালা, আইন ও নির্দেশিকা যুগোপযোগী করা। একইসঙ্গে জবাবদিহিতার মানদণ্ড ও পরিবীক্ষণের প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ও সমন্বয় নিশ্চিতসহ তদারকিতে নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে টিআইবি।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প প্রণয়নে সুশাসনের যে সকল চ্যালেঞ্জসমূহ পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিতেই কমিউনিটি পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রভাব এমনকি চাহিদা নিরূপণ কিংবা বিপদাপন্নতা বিশ্লেষণ করা হয়নি; ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিতেই প্রকল্প প্রণয়নকালে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি, এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে তথ্যের উন্মুক্ততার ঘাটতি রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বিসিসিটি কর্তৃক গুণগত পরিবীক্ষণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকালে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসনের পরিবীক্ষণে ঘাটতি এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়নে ঘাটতি। সুশাসনের ঘাটতির প্রভাব হিসেবে প্রকল্পের ফলাফল কার্যকর না হওয়া অন্যতম।

গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন টিআইবি’র রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এএসএম জুয়েল এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমিন। গবেষণায় আরো সংযুক্ত ছিলেন একই বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান এবং ম্যানেজার সিএফজি গোলাম মহিউদ্দিন।