ঝাড়খণ্ডে কয়লা খনিতে ধস, উদ্ধার ১১ শ্রমিকের দেহ

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার রাজমহল এলাকায় লালমাটিয়া কয়লাখনির ধস থেকে ১১ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্তত ৩৫ জন শ্রমিক খনির ভেতর আটকে পড়েছেন বলে প্রাথমিক সূত্রে খবর। ধসের মধ্যে ৩০০ ফুট গভীরে ডুবে গিয়েছে ১৫টি ডাম্পার ও চারটে পে-লোডারও। ওই সব ডাম্পার ও পে-লোডারের চালক-খালাসিরাও নিখোঁজ। মৃত শ্রমিকদের বেশির ভাগই বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। আহত কয়েক জন শ্রমিককে গোড্ডার মহাগামা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গোড্ডার পুলিশ সুপার হরিলাল চৌহান বলেন, “৩৫ জন আটকে থাকার খবর এলেও ঠিক কত শ্রমিক আটকে রয়েছেন এবং ক’টি ডাম্পার ও পে-লোডার খনিগর্ভে রয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। উদ্ধার কাজ চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটলেও উদ্ধার কাজ শুরু হতে হতে রাত একটা বেজে যায়। ঘটনার পরেই এলাকা জুড়ে লোডশেডিং হয়ে যাওয়ায় ও ভোরে ঘন কুয়াশা নামায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। পুলিশ সুপার হরিলালবাবু বলেন, “ঘটনাস্থলটি এতটাই দুর্গম যে রাতে উদ্ধারকারী দল পৌঁছতে সময় লেগে যায়। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।’’ মুখ্য সচিব রাজবালা বর্মা ও ডিজিপি ডি কে পাণ্ডে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।

রাজমহল ওপেন কাস্ট খাদানের মূল গেট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলে গিয়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল উদ্ধারকারী দল। দলের এক জন বলেন, “যে ভাবে ধস নেমেছে তাতে আটকে থাকা শ্রমিকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।” রাতেই উদ্ধারকারীরা মাটির তলা থেকে বের করেন মাইনিং সর্দার হেমনারায়ণ যাদবকে। ইসিএলের উর্যানগর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি জানালেন, কাজ চলছিল। হঠাৎই খনির পূর্ব দিকের মাটির স্তর ধসতে শুরু করে। প্রায় প্রায় তিনশো মিটার গভীর খাদে গিয়ে পড়ে একাধিক ডাম্পার, পে-লোডার, হলপ্যাক। শ্রমিকেরাও আটকে যান ধসে। হেমনারায়ণের কথায়, ‘‘মৃত্যুকে এতো কাছ থেকে আগে কখনও দেখিনি!’’

ইসিএল এই ওপেনকাস্ট কয়লাখনিটিকে মহালক্ষ্মী কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে চালাতে দিয়েছিল। ১০ বছর ধরে এই ওপেনকাস্ট কয়লাখনির বিস্তার ক্রমশই বাড়ছে। সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে ইসিএল-এর কর্তারা গিয়ে ওই এলাকায় আরও বেশি করে কয়লা তোলার নির্দেশ দেন। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এই খনি যে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সেটা সে দিন কেন বিশেষজ্ঞদের নজরে পড়ল না? স্থানীয় বাসিন্দারা আজ সকালে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ ও ইসিএল আধিকারিকদের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি কোনও রকম নিরাপত্তা ছাড়াই ওই খনিতে কাজ করানো হতো। গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবের দাবি, “ওই কয়লাখনিতে অবৈধ ভাবে কয়লা তোলা হচ্ছিল। এর ফলেই মাটি আলগা হয়ে ধস নামে।”

কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধি মানা হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা গাফিলতির কারণ খুঁজে বের করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। ইসিএল-এর ডিরেক্টর (ফিনান্স) এ এম মরাঠে বলেন, ‘‘এই দুর্ঘটনার পিছনে কারও গফিলতি প্রমাণ হলে দোষীরা শাস্তি পাবে।’’ পৃথক তদন্ত শুরু করেছে ডিরেক্টর জেনারেল মাইনস সেফটি (ডিজিএমএস)-ও।