ঢাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ

ঢাকা মহানগরীতে শব্দ দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীতে শব্দ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং জনসচেতনতার অভাবই শব্দ দূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কার্যালয়ে ‘ঢাকা মহানগরীতে শব্দ দূষণের বর্তমান চিত্র ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
চলতি মাসে মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে এ তথ্য তুলে ধরেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সোবহান। পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মডার্ন ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত, পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন সে আর স্বাভাবিক শব্দ কানে শুনতে পায় না। শব্দ দূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং শব্দ দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারি ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে।
আবদুস সোবহান বলেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬-এর আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। নীরব এলাকা হচ্ছে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি এবং এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা। নীরব এলাকায় চলাচলের সময় যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো এবং মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিবিধান থাকলেও সেগুলোর কোনো প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীতে শব্দ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। দূষণ বন্ধ করতে হলে আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা এবং সেই সঙ্গে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা প্রয়োজন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চলতি মাসে ঢাকার ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ  করে। এর মধ্যে এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্ব রোড, মহাখালী, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, কলাবাগান, ধানমণ্ডি, পান্থপথ, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, কলেজ গেট, শ্যামলী, টেকনিক্যাল ও মিরপুর উল্লেখযোগ্য। জরিপ করা স্থানগুলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা। নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা ৮৩ দশমিক ৩ থেকে ১০৪ দশমিক ৪ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় ৯২ দশমিক ২ থেকে ৯৭ দশমিক ৮ ডেসিবল এবং রাতে ৬৮ দশমিক ৭ থেকে ৮৩ দশমিক ৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিনের বেলায় ৮৫ দশমিক ৭ থেকে ১০৫ দশমিক ৫ ডেসিবল এবং রাতে ৮৫ দশমিক ৭ থেকে ১০৬ দশমিক ৪ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা ৯৪ দশমিক ৩ থেকে ১০৮ দশমিক ১ ডেসিবল। এ ছাড়া বাসের ভেতর শব্দের মাত্রা সামনে ৯৩ দশমিক ৬ থেকে ৯৫ দশমিক ২ ডেসিবল ও পেছনে ৮৪ দশমিক ৬ থেকে ৮৫ দশমিক ৪ ডেসিবল। বাংলামোটরে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজানোর সময় শব্দের মাত্রা ১১০ দশমিক ১ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৫ দশমিক ৮ থেকে ৯৬ দশমিক ৭ ডেসিবল।
এ হিসেবে নীরব এলাকায় দিনের বেলার শব্দের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। আবাসিক এলাকায় দিনের বেলা দেড় গুণ এবং রাতের বেলা শব্দের মাত্রার চেয়ে দেড় থেকে প্রায় দুই গুণ বেশি। মিশ্র এলাকায় দিনের বেলা দেড় গুণ বেশি, রাতের বেলা সেই মাত্রা দেড় থেকে দুই গুণেরও বেশি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ের দেড় গুণ বেশি।
শব্দ দূষণের ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ঘটতে পারে। উচ্চ শব্দ শিশু,  গর্ভবতী মা এবং হƒদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই শব্দ দূষণ শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানায় পবা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান ও গলা বিভাগের ২০১৩ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে এক-তৃতীয়াংশ লোক কোনো না কোনো শ্রুতিক্ষীণতায় ভুগছেন এবং ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রুতি প্রতিবন্ধী।