পিডিবিতে ক্রয়ে অনিয়ম: তদন্ত না হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে দোষীরা

পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মচ্ছব চলছে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি)। বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দরে যন্ত্রপাতি কেনার কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানিকে। এ দুর্নীতির কারণে দেশের বিদ্যুত্ খাতে একদিকে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহূত হচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি গুণতে হচ্ছে সরকারকে। পিডিবির এক শ্রেণির কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তার যোগসাজশে এ অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও কয়েকটি অনিয়ম অভিযোগের উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে পিডিবিকে। কিন্তু এ অনিয়ম তদন্তে পিডিবি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। ফলে একদিকে দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে না, অন্যদিকে অভিযোগগুলো অমীমাংসিত রয়ে যাচ্ছে।

গত ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক শামীম আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পিডিবির পরিচালক (ক্রয়) মো. আবু ইউসুফ এবং প্রধান প্রকৌশলী (উত্পাদন) এ এইচ এম কামাল সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুত্ বিভাগের উপ-সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান             স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চারটি বিদ্যুেকন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু ওই দুর্নীতি অভিযোগগুলোর এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, উন্নয়ন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়কাজে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মন্ত্রণালয় থেকে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে যতদূর জানা গেছে, এগুলোতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কেউ কেউ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করতে এ ধরনের অভিযোগ করেছে। তিনি জানান, অভিযোগগুলো তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি। তবে শিগগিরই তদন্ত করা হবে।

পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দোষীদের দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে অনিয়মের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠত।

অনিয়ম অভিযোগের চিত্র

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া অনিয়ম অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের বয়লার টিউব ক্রয় সংক্রান্ত। এটির প্রথম দরপত্রে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয় সাংহাই ইলেক্ট্রিক পাওয়ার জেনারেশন সার্ভিস কোম্পানি থেকে টিউব কিনতে হবে। পরে বলা হয়, সাংহাই বয়লার ওয়ার্কস থেকে টিউব সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু এ দুই কোম্পানির একটিও বয়লার টিউব তৈরি করে না। পছন্দের কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ যেন দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য এ শর্ত দেয়া হয়। দুই কোটি টাকার বিনিময়ে পিডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কাজ করেছেন।

শিকলবাহা বিদ্যুেকন্দ্রের ব্লেড কেনার দরপত্রে সিমেন্স জার্মানি থেকে ব্লেড সরবরাহ করতে বলা হয়। অথচ সিমেন্স নিজে এ ধরনের ব্লেড প্রস্তুত করে না। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়ে এটি সরবরাহ করে।