তেলের বাজারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপাকে সৌদি

তেলের বাজারের উপর অন্যতম শীর্ষ উত্তোলক ও রফতানিকারক দেশ  সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণ দিন দিন কমছেই। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর ইরানের তেল উৎপাদন বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তেলের বাজারের নিয়ন্ত্রণ আর এখন এককভাবে সৌদি আরবের উপর নির্ভরশীল নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্ববাজারে তেলের দামের অব্যাহত দরপতনের মুলে সৌদি আরবের তেল-অস্ত্র নীতি দায়ী ছিল, আর তাতেই দেশটির সরকার ঘরে-বাইরে দু জায়গাতেই এখন চরম চাপের মুখে রয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছে ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল।

বিগত বছরগুলোতে সৌদি রাজ পরিবারের গৃহীত বিতর্কিত তেল-অস্ত্র নীতি দেশটিকে কোন সুবিধা তো দিতেই পারে নি বরং এতে করে উল্টো লাভ হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর। ওপেকের অন্য সদস্যদের অনীহা সত্ত্বেও তেলের উৎপাদন একচেটিয়াভাবে বাড়িয়ে চলেছিল সৌদি আরব, উদ্দেশ্য ছিল মাত্রাতিরিক্ত তেল উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও রাশিয়ার অর্থনীতিকে নড়বরে করে দেয়া। এর ফলে বিশ্ব তেল বাজারে ধ্বস নেমেছিল আর প্রতিদ্বন্দ্বীরাও বিপদে পড়েছিল ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি সৌদি আরবের অর্থনীতিতেও বিশাল ধাক্কা লেগেছে এতে।

চলতি অর্থ বছরে দেশটির রপ্তানি আয় কমে গেছে প্রায় ৪৬ শতাংশ, যেখানে দেশটির প্রায় ৯৭ ভাগ রপ্তানি আয় হয় তেল থেকে। ঘাটিতি মেটাতে দেশটি ২০০৭ সালের পর এই প্রথম বারের মত বন্ড বিক্রি করা শুরু করেছে, সরকারি কাজে ব্যয় কমানোর নানান পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আশঙ্কা করা হচ্ছে সামনে দেশটি ১৪০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে, যেখানে শুধুমাত্র বিগত ২০১৩ সালেই বাজেট এ উদ্বৃত্ত ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ সৌদি সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে এই বলে যে, এভাবে চলতে থাকলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগামী ৫ বছরের মধ্যেই ফুরিয়ে যেতে পারে।

এমতাবস্থায়, সৌদি সরকার নিজের অর্থনীতি বাঁচাতে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে । কিন্তু, পরিস্থিতি এখন দ্রুত বদলাচ্ছে, বিশ্ব বাজারে তেল বানিজ্যের গতিপথ অনেকটাই বদলে গেছে বিগত ২-৩ বছরে। বিশ্ব বাজারে যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজেই অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ, যা ছিল সৌদি আরবের তেল রপ্তানির অন্যতম বড় একটি বাজার। অন্যদিকে, ইরান এবং রাশিয়াও তাদের বাজারকে স্থিতিশীল করে নিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে, ওপেকের অন্য সদস্যারা মুখে বললেও বাস্তবে, এখন যার যার অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে তেলের উৎপাদন সহসাই কমাতে পারছে না, ফলে তেলের দামও সৌদিদের আশা অনুযায়ী বাড়ছে না। ওপেকের উপর এভাবেই ক্রমে সৌদিরা তাদের কর্তৃত্ব হারাচ্ছে, সব মিলিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছে এখন তেল সমৃদ্ধ এ দেশটি।