নিনমাসে হচ্ছে সাইক্লোট্রন বিভাগ: পরমাণুতে পুরো ক্যান্সার নির্ণয়

পেট-সিটি এন্ড সাইক্লোট্রন বিভাগ চালু করতে যাচ্ছে নিনমাস। এরফলে পরমাণু ব্যবহার করে ক্যান্সার পরীক্ষার পুরো কার্যক্রম চালু হবে। ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্স (নিনমাস) এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারে এই কার্যক্রম চালু হবে। এখন এখানে শুধু পেট-সিটি বিভাগ আছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সাইক্লোট্রন বিভাগও খোলা হবে। এর পর ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য আর কাউকে বিদেশ যাওয়া লাগবে না। দেশেই এই রোগের পুরোটা নির্ণয় করা যাবে।
পেট-সিটি বিভাগে ক্যান্সার কতটা ছড়িয়েছে তা পরীক্ষা করা হয়। পেট-সিটি পরী¶ার জন্য হাতে ক্যানুলা দিয়ে ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। এই ইঞ্জেকশন এর ওষুধ তৈরি করা হয় সাইক্লোট্রন বিভাগে। এই ইঞ্জেকশন এমন যে, এটা তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায় না। তৈরির পর প্রতি ১১০ মিনিটে অর্ধেক হয়ে যায়। অর্থাৎ যতটা ওষুধ তৈরি হয় তা সাথে সাথে ব্যবহার না হলে ১১০ মিনিটে তার অর্ধেক হয়ে যাবে। এভাবে এটা শেষ হয়ে যায়। তাই এটা তৈরি এবং ব্যবহার এক সাথে করতে হয়।
বাংলাদেশে এখন একমাত্র বেসরকারিভাবে স্থাপিত ইউনাইটেড হাসপাতালে সাইক্লোট্রন বিভাগ চালু আছে। সেখানে এই ইঞ্জেকশন তৈরি হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেন্টার ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ইঞ্জেকশন নিয়ে পেট-সিটি বিভাগ চালু রেখেছে। এতে খরচ বেশি হচ্ছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেন্টারে এই বিভাগ চালু হলে খরচ কমে আসবে। বাংলাদেশে এখন শুধু বঙ্গবন্ধু সেন্টার ও ইউনাইটেড হাসপাতালেই পেট-সিটি সেবা আছে। আর কোথাও নেই।
বঙ্গবন্ধু সেন্টারে এখন সপ্তাহে একদিন, শুধু মঙ্গলবার এই সেবা দেয়া হয়। এই পরী¶া করতে হলে আগেই সময় নিতে হয়। তবে এই মুহুর্তে জনবল কম থাকায় রোগীকে সেবা নিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। সপ্তাহে একদিন পরীক্ষা হয় বলে এই দীর্ঘ অপেক্ষা।
নিনমাসের বঙ্গবন্ধু সেন্টারের পরিচালক নুরুন নাহার বললেন, পরমাণু বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ করেছে। ক্যান্সার সেবার জন্য এখন আর বিদেশ নয়। দেশেই এর সব পরীক্ষা হচ্ছে। বাংলাদেশে চিকিৎসায় পরমাণুর ব্যবহার এই সেবা দিচ্ছে। পেট-সিটিতে বর্তমানে প্রচুর রোগী বিশেষত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এরফলে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রোগীদের বিদেশে যাওয়া কমেছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ক্যান্সারের যেসব রোগী প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে তাদেরকে এর মাধ্যমে কিছুটা ¯^স্তি দেয়া যায়। তিনি বলেন, সাইক্লোট্রন বিভাগ চালু হলে আমরা সপ্তাহে দুই দিন এই পরীক্ষা করা শুরু করব। তখন অপেক্ষা কিছুটা কমবে আশা করা যায়।
পেট-সিটি পরী¶ার জন্য ইঞ্জেকশনের পর স্ক্যান করার আগে আনুমানকি এক ঘন্টা অপে¶া করতে হয়। এই এক ঘন্টা সময় চোখ বন্ধ করে বসে অথবা শুয়ে বিশ্রাম করতে হয়। স্ক্যান এর জন্য ২০-২৫ মিনিট চিত হয়ে মেশিনের বেডে শুয়ে থাকতে হবে। এসময় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হয়। পুরোটা শেষ হতে আনুমানিক ৪/৫ ঘণ্টা সময় লাগে।
পেট-সিটি একটা বিশেষ পরী¶া। এই পরী¶া সুষ্ঠভাবে করতে এবং নির্ভুল প্রতিবেদন পেতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। গর্ভবতী অবস্থায় এই পরী¶া করা নিষেধ। মহিলা রোগীদের মাসিক এক মাস অথবা বেশীদিন বন্ধ থাকলে তা ডাক্তারকে অবশ্যই জানাতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। চিনি বা মিষ্টি ফল খাওয়া যাবে না। শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হয়। বেশি সবজি খাওয়া যাবে। তবে আলু, বাঁধাকপি ও শাক খাওয়া যাবে না। আমিষ জাতীয় খাবার বেশী পরিমানে খাওয়া যাবে। যেমন ডিম, মাছ, মুরগীর বুকের মাংস। চা, কফি, কোকাকোলা, পান, জর্দ্দা, ধুমপান করা নিষেধ। দুধ ও দুধের তৈরি খাবার খাওয়া নিষেধ। চব্বিশ ঘন্টায় দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। ডায়াবেটিস পুরো নিয়ন্ত্রনে থাকতে হবে।