পাকিস্তানে তেলের ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ, ১৪০ নিহত

ঈদের আগেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকের ছায়া নেমে এল পাকিস্তানে। রবিবার সাত সকালে সে দেশের পঞ্জাব প্রদেশে তেলের ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্ততপক্ষে ১৪০ জনের। আহতের সংখ্যাও শতাধিক। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রশাসন। মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন সকালে পঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুর শহরে আহমদপুর শারকিয়ার কাছে জাতীয় সড়কে একটি তেলবোঝাই ট্যাঙ্কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। প্রায় ৫ হাজার লিটার জ্বালানী তেল ছিল ওই ট্যাঙ্কারে। উল্টে যাওয়ার পরই ট্যাঙ্ক লিক করে সেই তেল জাতীয় সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় জমান সেখানে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ওই জ্বালানী তেল সংগ্রহে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, জড়ো হওয়া লোকগুলোর মধ্যে থেকেই কেউ এক জন সিগারেটে ধরানোতেই এই বিপত্তি। পর মুহূর্তেই ট্যাঙ্কারটিতে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শ’খানেক লোকের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পরই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো এলাকা। রাস্তার চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়িও সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দেহগুলি এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া সনাক্ত করাই সম্ভব নয়।
দুর্ঘটনায় আহত মহম্মদ হানিফ নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি বলেন, “তেলের ট্যাঙ্কার উল্টে তেল ছড়িয়ে পড়ার খবর দেয় আমার এক ভাই। বোতল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আশতে বল। যখন বাড়ি থেকে বেরোই দেখি শ’য়ে শ’য়ে লোক ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়চ্ছে। কিছু মানুষ আবার মোটরবাইক নিয়ে সে দিকে যাচ্ছিল। আমি ও আমার ভাই সেখানে পৌঁছে অন্যদের সঙ্গে তেল সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। প্রচুর পেট্রোল রাস্তায় পড়ে ছিল। হঠাত্ই জোরালো একটা বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই ঝলসে গেল তেল সংগ্রহকারী লোকগুলো। চিত্কার, আর্তনাদ আর রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা পোড়া দেহগুলো…ভয়ানক দৃশ্য! ট্যাঙ্কার থেকে কিছুটা দূরে থাকার কারণেই হয়ত বেঁচে গেলাম এ যাত্রায়।” হানিফ আক্ষেপ করে বলেন, “গ্রামবাসীদের লোভই তাঁদের মৃত্যুর উপত্যকায় পৌঁছে দিল।”

খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দমকলের ২টি ইঞ্জিন। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনেন তাঁরা। ছুটে আসে উদ্ধারকারী দল। পরে সেনা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আহতদের উদ্ধারের কাজ চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।