পিডিবির ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যাংকে অলস জমা

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় সাত হাজার ৭০০ কোটি টাকা অলস রেখে দিয়েছে। বিনিয়োগ না করে এ থেকে দুই থেকে তিন শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে ।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের এক পর্যালোচনায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মোট সাত হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ঢাকার পিডিবি সদস্য (অর্থ পরিদফতর)-এর অধীনে পাঁচ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিভিন্ন বিতরণ অঞ্চলের অধীনে ব্যাংক হিসেবে জমা আছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে পিডিবি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এই অর্থ জমা রাখা প্রয়োজন।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি মাসে পিডিবির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর প্রতিমাসে খরচ দুই হাজার ৪৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে প্রতিমাসে পিডিবির ঘাটতি থাকে ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকা।
সাধারণত পিডিবি তিন মাসের পরিচলন খরচ জমা রাখে। তিন মাসে প্রয়োজন হয় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, পিডিবির প্রায় সব অর্থই স্বল্প মেয়াদে জমা রাখা। ব্যাংক ভেদে এমন আমানতের ওপর সুদের হার আড়াই থেকে তিন শতাংশ।

জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পিডিবির কাছে এ বিষয়ে জবাব চাই বিদ্যুৎ বিভাগ। এবিষয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ কিছু জানেন না বলে বৈঠকে জানান।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, সরকারের উচিত পিডিবিকে ব্যবসায় করার জন্য হিসাব পরিস্কার রাখা।

অভিযোগ রয়েছে, এমন সব ব্যাংকে এসব টাকা রাখা হয়েছে যাদের সঙ্গে বছরের পর বছর কোনও লেনদেনও করা হয়না।
এদিকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে পিডিবির লোকসানের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। চলতি বছর  সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে পিডিবি।

তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহম্মদ বলেন, এভাবে ব্যংকে টাকা ফেলে রাখাটা উদ্দেশ্যমূলক। একদিকে পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় বারবার বলছে তারা লোকসান দিচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে ব্যাংকে পড়ে আছে অলস টাকা। এই টাকা পিডিবি যদি খরচ করতো তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনই পড়তো না। এক দিকে তারা বেশি সুদে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করছে অন্যদিকে কম সুদে নিজেরদের টাকা ফেলে রেখেছে। এভাবে টাকা ফেলে না রেখে সুষ্ঠুভাবে  বিনিয়োগ করলে লোকসান কম হতো। বিদ্যুতের দাম কমে আসতো।