প্রসঙ্গ রামপাল: বাংলার পণ্ডিত ইংরেজি বলছে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশ সফর করা ইউনেসকো প্রতিনিধি বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ নন। দেশের যারা সমালোচনা করছেন তারাও এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। বাংলার পণ্ডিত ইংরেজি আর ইংরেজির পণ্ডিত বাংলা বললে যা হয় তাই হচ্ছে আমাদের। যারা দেশের উন্নয়নে না আর না করেন তারা কোন কাজেই হ্যাঁ করবেন না। তাদের কথা শুনলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আজ বৃহস্পতিবার পাক্ষিক এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকার ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বড় প্রকল্প বিতর্ক’ বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বড় প্রকল্পগুলো সময়মতো আসছে না। এগুলো নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরী হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও দক্ষতার অভাবেই এ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রামপাল নিয়ে যে আন্দোলন তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেন তারাও রাজনৈতিক। তিনি বলেন, জ্বালানি খাত আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বড় বড় প্রকল্পের জন্য অর্থ এখন আর কোন সমস্যা না। বিনিয়োগকারি আছে উন্নয়ন অংশীদাররা এগিয়ে আসছে। টাকা কোনো সমস্যা নয়। সিদ্ধান্ত নেয়াটাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এখন ঠিক করছি কাকে কোন প্রকল্প দেব। ৩০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। টাকা খরচের জায়গা নেই। ইতিবাচক চিন্তা করুন। আসুন, সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর ভিশন। এটা সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।
আলোচনায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ট্রাইব্যুনালের প্রধান ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বলকান্তি ভট্টাচার্য, বিইআরসির সাবেক সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক, ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতুর্জা আহমেদ ফারুক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বড় প্রকল্প নিয়ে দেশে নানা বির্তক রয়েছে। এরমধ্যে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের জন্য পরিবেশ নিয়ে, পারমাণবিক বিদ্যুতের নিরাপত্তা, এলএনজি’র দাম নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সক্ষমতা না থাকলে আমদানি করা জ্বালানির ব্যবস্থাপনা ও চুক্তির বিষয়ে সমস্যা হবে। আন্তর্জাতিক চুক্তিতে দক্ষতার পরিচয় না দিলে দেশের উন্নয়নে বিঘ্ন হতে পারে।
অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, সরকারের সবাই বড় বড় কথা বলে। গত আট বছর তারা শুধু বলেই গেছে। এজন্য সময়মতো বড় কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১০ সালে উদ্যোগ নিয়ে এখনও এলএনজি টার্মিনালের কাজ এখনো শুরু হয়নি। ফলে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমলেও তার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে না। শামসুল আলম বলেন, যত বড় প্রকল্প তত বেশি দুর্নীতি। এসব প্রকল্প হচ্ছে দায় মুক্তি আইনে। তাই স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়। তিনি বলেন, ইউনেস্কোর পরামর্শ না শুনে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকা থেকে বাদ পরতে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রীর পাওয়া জলবায়ু পুরষ্কারের ওপর একটি চিরস্থায়ী কালিমা পড়বে। মিজানুর রহমান বলেন, পারমাণবিক বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে কিনা তা নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। রাশিয়া যদি এটা পরিশোধন করে আবার ফেরত দেয় তখন এই তেজস্ক্রীয় জ্বালানি বোঝা না হয়ে সম্পদ হবে। কারণ পরিশোধনের পর এটা পুনঃব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠে। মর্তুজা আহমেদ ফারুক বলেন, বাপেক্স পাঁচ বছরে ১০৮ টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা উচ্চাভিলাসী।