বাংলাদেশের সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করবে ভারত

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ভারতীয় রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি ওএনজসির সঙ্গে উত্পাদন বন্টন চুক্তি (পিএসসি) সাক্ষর করলো পেট্রোবাংলা। এ চুক্তির আওতায় অগভীর সাগরে ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে খনিজ অনুসন্ধান পরিচালনা করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি। খনিজ সম্পদ পাওয়া গেলে ভারতীয় কোম্পানির অংশটুকু বাংলাদেশেই বিক্রি করতে হবে, রপ্তানি করতে পারবে না তারা।
গতকাল সোমবার পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি যৌথ চুক্তি হয়েছে। ভারতের ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড (ওভিএল), ওয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড (ওয়েল) এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) যৌথভাবে খনিজ অনুসন্ধান করবে। এখানে বাপেক্সে অংশ থাকবে ১০ ভাগ। এই তিন কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জ্বালানি বিভাগের উপসচিব খাদিজা নাজনীন ও পেট্রোবাংলার পক্ষে সচিব ইমাম হোসেন চুক্তিতে সই করেন। অন্যদিকে ওএনজিসি ভিদেশের পক্ষে এ জি দুগ্গাল, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের পক্ষে এন হাজারিকা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) পক্ষে আব্দুস সবুর সই করেন চুক্তিতে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ি, গ্যাস পাওয়া গেলে তা ভারতীয় কোম্পানির অংশ অবশ্যই পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করতে হবে। পেট্রোবাংলা কিনতে সম্মত না হলে বাংলাদেশের মধ্যেই অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা বিক্রি করতে পারবে। কোম্পানির আয়কর, কোম্পানিতে চাকরিজীবিদের আয়কর, বা অন্য কোন প্রতিনিধির আয়কর ভারতীয় কোম্পানিকেই দিতে হবে। প্রসঙ্গত, এর আগের পিএসসি অনুযায়ি আয়করগুলো পেট্রোবাংলা বহন করতো।
চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জ্বালানির কোন বিকল্প নেই। ভারতের সঙ্গে চুক্তির ফলে জ্বালানি চাহিদা মোকাবেলায় একধাপ অগ্রগতি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এ চুক্তির ফল হয়তো আগামী ৫ বছরেও পাওয়া যাবে না। কিন্তু এখনি যাত্রা শুরু না হলে ভবিষ্যত্ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ নিস্পত্তি হলে সাগরের আরও বেশি এলাকাজুড়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এএনজিসি ভিদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডি কে সারাফ বলেন, খুব শিগগিরই বাংলাদেশে আমাদের অফিস স্থাপন করা হবে। এরপর পরই আমরা সাগরে দ্বিমাত্রিক জরিপের কাজ শুরু করবো। এরপর অনুসন্ধান কাজ শুরু করার ব্যাপারেও আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিব।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুত্ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব মোজাম্মেল হক খান, ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।
পেট্রোবাংলা জানায়, প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের মধ্যেই এই অনুসন্ধান শেষ করতে হবে। পরে আরো তিন বছর সুযোগ পাবে তারা। এই কোম্পনি কখন কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। তাদের নিজেদের গাফিলতির কারণে কোন ক্ষতি হলে সেই ক্ষতিপূরণও পাবে না। প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫৫ ভাগ খরচ তুলতে পারবে। গ্যাস পাওয়া গেলে পেট্রোবাংলা ৬০ ভাগ এবং সর্বোচ্চ ৮৫ ভাগ লাভ পাবে। তেল পাওয়া গেলে নিম্নে ৭০ ভাগ এবং সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ লাভ পাবে।
চুক্তির আওতায় ৪ নম্বর ব্লকে থাকছে ৭ হাজার ২৬৯ বর্গকিলোমিটার। এখানকার পানির গভীরতা ১০ থেকে ১০০ মিটার। এ ব্লকে দুই হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ এবং ২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালাবে তারা। দুটি অনুসন্ধান কূপ খননসহ এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে তারা ৫ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করবে প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে ৯ নম্বর ব্লকে চুক্তির আওতায় আছে ৭ হাজার ২৬ বর্গকিলোমিটার। এখানকার পানির গভীরতা ১০০ থেকে ৩০০ মিটার। এ ব্লকে দুই হাজার ৮৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ ও ৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ পরিচালনা করবে ওএনজিসি। দুই পর্যায়ে মোট তিনটি অনুসন্ধান কূপ খননসহ এ কাজে সাড়ে আট কোটি ডলার ব্যয় করবে প্রতিষ্ঠানটি।