বিদ্যুতের দামে মতৈক্য ত্রিপুরা-ঢাকা

ভারতের ত্রিপুরার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের দামে এক মত হয়েছে দুই দেশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৫ রূপি ৫০ পয়সা (৬ টাকা ৪৩ পয়সা)। আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি শেষে এই বিদ্যুত বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছে দ্ইু দেশের বিদ্যুত মন্ত্রী।
শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দু’দেশের যৌথ বৈঠকে বিদ্যুতের এই দাম নির্ধারণ করা হয়। সব ধরনের অবকাঠামো স্থাপন করার পরও দাম জটিলতার কারণে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছিল না। গতকাল দু’দেশের কারিগরি কমিটির যৌথ বৈঠকে এ দাম নির্ধারণ করা হলো।
বৈঠক শেষে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মানিক দে ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা জানান। এসময় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক ঘনশ্যাম প্রসাদ, ত্রিপুরার মুখ্য সচিব এস কে রাকেশসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়েছে, ত্রিপুরা থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে তার স্থায়ী (ক্যাপাসিটি) কোনও খরচ নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করলেই বিল দেবে, না নিলে কোনও বিল দেয়া লাগবে না। এর জন্য আলাদা কোন সঞ্চলন খরচও নেই। ভারতের শেষ সীমানা থেকেই এই দামে বিদ্যুৎ নেবে বাংলাদেশ।
ত্রিপুরার বিদ্যুৎ মন্ত্রী মানিক দে বলেন, বাংলাদেশ সরকার তাঁর দেশ থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করবে তার পরিমাণ খুব বেশি না। তবে এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা ছাড়া পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্ভব হতো না। সে সময় ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় আজ দুই দেশ বিদ্যুতের লেনদেন করছে। নিজ দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকা সত্বেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই এই বিদ্যুৎ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এই বিদ্যুৎ আমদানির মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

manik day & nosrul hamid

বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এই ৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নেয়া ২৫০ মেগাওয়াটের দাম প্রতি ইউনিট দুই রূপি ৪৬ পয়সা। বাকি ২৫০ মেগাওয়াট বেসরকারিভাবে নেয়া হচ্ছে, যার দাম প্রতি ইউনিট পাঁচ রূপি ৪৬ পয়সা। এখানে ক্যাপাসিটি খরচ আছে।
ত্রিপুরার বিদ্যুৎ আমদানির জন্য উভয় দেশ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছে। ভারত প্রথমে ত্রিপুরার বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট প্রায় আট রূপি করে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সম্মত হয়নি। সেজন্যই বিদ্যুৎ আমদানি সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে দর কষাকষির পর ভারত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে পাঁচ রূপি করে দিতে সম্মত হওয়ায় ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পথ সুগম হয়েছে।
দুই মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শেষে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীর সম্মানে নৈশ্য ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আতিথেয়তা ভোলার নয়। বাংলাদেশ ভারত একে অন্যের সহদর হিসেবে আছে থাকবে। ১০০ মেগাওয়াট যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে ত্রিপুরা দিচ্ছে তা অর্থের বিনিময়ে বিচার যোগ্য নয়। আন্তরিকতা দিয়ে বিচার করতে হবে।