সামিট-জিই-একক্সিলারেট এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে

সিঙ্গাপুর ভিত্তিক নবগঠিত কোম্পানী সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) শুক্রবার যৌথভাবে বাংলাদেশে গ্যাসভিত্তিক কম্বাইনড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও একটি  ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল করার ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশে সামিটের মেঘনাঘাট ২ প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক কম্বাইনড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য অর্থায়নে প্রধান সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছে। এর মধ্য দিয়ে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল মোট তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানী জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এর আর্থিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জিই ক্যাপিটালস এনার্জি ফিনানসিয়াল সার্ভিসেস সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের সাথে ইক্যুয়টি ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই সমঝোতা চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মূলত প্রতিষ্ঠান দুটি চুক্তিবদ্ধ হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, জিই আগামী ৩৬ মাস সামিট এর গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পগুলিতে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে।

অন্যদিকে ভাসমান টার্মিনালে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের জন্য সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানীর সাথে মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির ১৫ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এক্সিলারেট এনার্জি তাদের বিদ্যমান অন্যতম একটি ফ্লোটিং  স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে এই গ্যাস সরবরাহ করবে।

সিঙ্গাপুরের দি ফুলারটোন হোটেলে চুক্তি সই হয়। এসময়  বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, এসডিজি’র প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, সিঙ্গাপুর সরকারের সাবেক মন্ত্রী লিম উই উয়া, ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ (ওঊ) সিঙ্গাপুরের অ্যাসিসটেন্ট সিইও সাতভিন্দর সিং এবং সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।

সামিট ও জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এর সমঝোতা চুক্তিটিতে সই করেন সামিট কর্পোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল খান এবং জিই এর পক্ষে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও বানমালী আগারওয়াল। অন্যদিকে সামিট ও এক্সিলারেট এনার্জির চুক্তিটিতে সই করেন সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানী (এসএলটিসি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এন এম তারিকুর রশিদ ও এক্সিলারেট এনার্জি এশিয়ার জেনারেল ম্যানেজার কার্লমান থাম।

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর উন্নয়নের জন্য  আগামী ৩ বছরে বাংলাদেশে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।  গত ২০ বছর ধরে সামিট এর সাথে জিই ও আইএফসি’র দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক আছে। এই বিনিয়োগ চুক্তি তার অন্যতম উদাহরণ। সামিট এখন অধিক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।  দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে সামিটের নাম বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। এলএনজি টার্মিনাল উন্নয়নে এক্সিলারেট এনার্জির  সাথে সামিট প্রথমবারের মতো চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এই অঞ্চলে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের  জন্য আমরা অন্যতম পছন্দসই  প্রতিষ্ঠান হতে চাই। এশীয় অঞ্চলে অন্যতম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের  ব্যবসায়িক অংশীদারদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্ক গড়তে চাই।’
জিই দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও বানমালী আগারওয়াল বলেন, কৌশলগত এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে এই অঞ্চলে সামিটের সাথে আমাদের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেল। বাংলাদেশে  বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সামিটের সাথে জিই প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরণের সেবা ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পাশে থাকতে চায়’।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এর এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হেড অব নিউ বিজনেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস লুবোমির ভারবানোভ বলেন, ‘সামিটের সাথে আমাদের সম্পর্ককে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করি এবং বাংলাদেশে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সামিটের প্রধান উদ্দেশ্যকেও ভীষণভাবে সমর্থন করি। এর আগে ১৯৯৭ সালে আইএফসি সামিটের খুলনা পাওয়ার কোম্পানী প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থায়ন করেছে এবং পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে বিবিয়ানাতেও আইএফসি অর্থায়ন করেছে। এছাড়া সম্প্রতি ২০১৬ অর্থবছরেই আইএফসি, আইএফসি এমার্জিং এশিয়া ফান্ড ও ইএমএ পাওয়ারের সহায়তায় সামিটে অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়ে জনগোষ্ঠীর উন্নতির জন্য সামিট এর  মতো প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে আইএফসি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।’

এক্সিলারেট এনার্জির জেনারেল ম্যানেজার কার্লমান থাম বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের উন্নয়নে সামিটের অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত।