বিদ্যুৎ গুরুত্ব পেলেও আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত

বিদ্যুৎখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হলেও জ্বালানিখাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে সমন্বয়ের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বিদ্যুতের পরিকল্পনা। জ্বালানিখাতের বরাদ্দ দিয়ে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান সম্ভব নয়। তাই আমদানি নির্ভর হয়েই থাকতে হবে বাংলাদেশকে। বরাদ্দের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা করা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নজরদারির প্রয়োজন বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ২১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা বিদ্যুতের এবং মাত্র ২ হাজার ১১১ কোটি টাকা জ্বালানিখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেইন বলেন, বিদ্যুতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু জ্বালানি খাতকে বরাবরের মতোই অবহেলা করা হয়েছে। জ্বালানিখাতে প্রয়োজনের সঙ্গে মিল রেখে এগুনো যায়নি। যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাতে প্রাথমিক জ্বালানি ঘাটতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। অথচ বাংলাদেশ প্রাথমিক জ্বালানি ঘাটতির দেশ। ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরো প্রকট হবে। এজন্য প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। তিনি বলেন, এই বরাদ্দ দিয়ে দেশীয় জ্বালানিখাতে কিছুই হবে না। সরকার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর জ্বালানির যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। কয়লা, এলপিজি, এলএনজি সবই আমদানি করা হবে। এতে বেড়ে যাবে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম। সবকিছু বিবেচনা করেই পরিকল্পনা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেটে আগের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ানোর হয়েছে। এটি ভালো। কিন্তু এই খাতের দুর্নীতির সুযোগ অনেক বেশি। তাই বাজেটের যেন সুষ্ঠু ব্যবহার হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎখাতে গত কয়েক বছর ধরেই বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বরাদ্দের সঙ্গে মিল নেই বাস্তবতার। বাস্তবে সেই লোডশেডিং হচ্ছেই। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমছেই না। একদিকে লোডশেডিং অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে বার বার। তিনি বলেন, সরকারের উচিত গ্যাস-বিদ্যুতের মতো পণ্যগুলো সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা। যাতে করে মানুষের ভোগান্তি কমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎখাতে প্রচুর দুর্নীতি হয়। তাই বেশি বরাদ্দ দিয়ে লাভ নেই। সেই বরাদ্দ ঠিকমতো কাজে লাগছে কিনা তাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গত কয়েক বছরের বাজেট দেখলে দেখা যায় যে, বরাদ্দ বেশিই হচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। সঙ্গে এর সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য সঠিক পরিকল্পনাও করতে হবে। পরিকল্পনাও আবার ঠিক মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তাও নজরে রাখতে হবে। শুধু বিদ্যুতের নয়, বিদ্যুতের সঙ্গে জ্বালানিরও সমন্বয় জরুরি।