বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সাক্ষাৎকার

নসরুল হামিদ

জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষে এনার্জি বাংলার সাথে কথা হয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের।

এনার্জি বাংলা: জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ শুরু হচ্ছে, এনিয়ে কিছু বলুন।

নসরুল হামিদ: বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে শেখ হাসিনার সরকারের অব্যহত সাফল্য জনগণকে অবহিত করতে এই আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এরমাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী করতেও সাহায্য করবে। আমরা সকলকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করছি। জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্বুদ্ধ করতে এবং জনসচেনতা বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ধারনা পায় এজন্য এবার ২০০ জন প্রকৌশল
বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী এবং ২০ থেকে ৩০ টি স্কুল কলেজ পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী মেলায় উপস্থিত থাকবেন। বিদ্যুৎ সপ্তাহ উপলক্ষে বিদ্যুৎ জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে গবেষণা বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ১০ টি প্রকল্পকে মেলায় উপস্থাপন করা হবে।

এনার্জি বাংলা: আপনারা ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসব করছেন।

নসরুল হামিদ: হ্যাঁ। এটা একটা মাইলফলক। তাই এই উদযাপন। ১০ হাজার মেগাওয়াটের সময় উদযাপন করা হয়েছিল এখন ১৫ হাজার মেগাওয়াটের উদযাপন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে রূপকল্প দিয়েছেন আমরা সে অনুযায়ি কাজ করছি। ২০২১ সালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে। সে সময় দরকার হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। গত আট বছরে যোগ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। আর ২০২১ পর্যন্ত লক্ষ্যপূরণ করতে লাগবে আরও নয় হাজার মেগাওয়াট। পরিকল্পনা অনুযায়ি আগামী পাঁচ বছরে যোগ হবে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

এনার্জি বাংলা: ১৫ হাজারের উৎসব করছেন। কিন্তু এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহে শহর গ্রামের মধ্যে বৈষম্য আছে। শহরের মানুষ ভাল বিদ্যুৎ পায়।

নসরুল হামিদ: ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বন্টনে শহর এবং গ্রামের মধ্যে দূরত্বও কমে আসছে।

এনার্জি বাংলা: ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কীভাবে হচ্ছে ব্যাখ্যা কি?

নসরুল হামিদ: জাতীয় গ্রিডে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি আছে। এরমধ্যে আমদানি করা হচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াট। ৫০০ মেগাওয়াট হচ্ছে সৌরসহ অন্য উৎস থেকে। এর বাইরে আরও আড়াই হাজার মেগাওয়াট হচ্ছে ক্যাপটিভ থেকে।

এনার্জি বাংলা: পরিকল্পনা অনুযায়ি কি যথাযথভাবে এগুচ্ছেন?

নসরুল হামিদ: বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। উন্নত বিশ্বের সুযোগ সুবিধা আমাদের এখানেও করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যোগান। এ চাহিদা পুরণে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা ২০১০ পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করে
রূপকল্প ২০১৬ করা হয়েছে। জ্বালানি খাতকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

এনার্জি বাংলা: বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসেনি। এতে লক্ষ্য থেমে গেছে কিনা?

নসরুল হামিদ: স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে আগানো হচ্ছে। স্বল্প মেয়াদে সফল হয়েছে। বড় বিদ্যুৎ
কেন্দ্রগুলো আসতে একটু দেরি হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করবে। তবে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত গতিতে হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

এনার্জি বাংলা: চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে এগুনো যাচ্ছে?

নসরুল হামিদ: চাহিদা অনুযায়ি এগুনো হচ্ছে। ২০২১ সালে আরও আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে।২০২৩ সাল নাগাদ ২০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হবে আশা করি।

এনার্জি বাংলা: এই কর্মযজ্ঞে বিনিয়োগ কোন সমস্যা বলে মনে করেন?

নসরুল হামিদ: না। বিনিয়োগে কোন সমস্যা নেই। আগামী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিনিয়ন নিশ্চিত হয়েই আছে। সরকার, বেসরকারিখাত, বিদেশি বিনিয়োগ সব মিলে এগুনো হচ্ছে। বিনিয়োগ কোন সমস্যা না। গত আট বছরে সরকার ও বেসরকারিখাত মিলে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।
২০২১ সালের মধ্যে আরও ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। ২০৩০ সালে হবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। ফলে বিনিয়োগ কোন সমস্যা না।

এনার্জি বাংলা: প্রাথমিক জ্বালানি নিয়ে কিছু বলুন।

নসরুল হামিদ: ভোলায় যে গ্যাস পাওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।বিদ্যুতের কারণে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেছে। নতুন করে গ্যাস পাওয়া গেলে তা দেশের উন্নয়নকে আরো বেগবান করবে।

এনার্জি বাংলা: জ্বালানি চাহিদা পূরণে নতুন কোন উদ্যোগ আছে?

নসরুল হামিদ: দেশের জ¦ালানি চাহিদা পুরণে সরকার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এলএনজি আমদানির জন্য এরই মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে এলএনজি সরবরাহ করা হবে। তখন গ্যাসের সমস্যাও কিছুটা মিটবে।

এনার্জি বাংলা: সবমিলিয়ে কিছু বলুন।

নসরুল হামিদ: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ভিশন দিয়েছেন।এই জয়যাত্রায় জনগণের সহযোগিতা চাই। দেশটা এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা চাই।