রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র: জবাব দিতে ইউনেসকোতে তৌফিকসহ প্রতিনিধিদল

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইউনেসকোকে জবাব দিতে প্যারিস গিয়েছেন বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী।
সম্প্রতি ইউনেসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান থেকে বাদ দিয়ে ঝুঁকি তালিকায় নেয়ার প্রস্তাব করেছে। আগামী জুলাই মাসে তাদের বার্ষিক সাধারন সভায় এই প্রস্তাব পাশ হবে। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবনের পাশের কারখানা অনুমোদনের কারণে এই প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেই প্রস্তাব যাতে পাশ না হয়। সুন্দরবনকে যাতে ঝুঁকি তালিকায় না আনা হয় তার পক্ষে ব্যাখ্যা দিতেই এই প্রতিনিধি দল প্যারিস গিয়েছেন।
আজ রোববার সকালে ঢাকা ছেড়েছেন প্রতিনিধি দল। আগামীকাল সোমবার ইউনেসকোর সাথে বৈঠক হবে।
সুন্দরবনের নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে নেয়া পরিবেশের সুরক্ষা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রযুক্তি তুলে ধরা হবে ইউনেসকোর কাছে।
তৌফিক-ই-ইলাহী ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী  খালেদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্যরা।
প্যারিস রওয়ানা দেয়ার আগে শুক্রবার মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলেও সুন্দরবন ও পরিবেশ রক্ষায় যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হবে। বায়ু ও পানি দূষণ রোধেও যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হবে। একই সাথে সরকার যে সুন্দরবন রক্ষায় আন্তরিক তাও তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, আগামী জুলাই মাসে ইউনেসকোর বার্ষিক সাধারণ সভার আগে প্রাক আলোচনার জন্য এই বৈঠক।
গতবছর সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার জন্য
বাংলাদেশের কাছে সুপারিশ করে ছিল জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেসকো। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে উল্লেখ করে তা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বলে তারা।
গতবছরের মার্চে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ইউনেসকোর তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল সরকারকে দেয়া প্রতিবেদনে এই অনুরোধ জানায়। প্রতিবেদনে তারা বলেছিল, এখনই সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলসহ ইউনেসকোর সুপারিশ মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছিল।
ইউনেসকো সেসময় জানিয়েছিল, রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদন (ইআইএ), প্রকল্পের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানির বক্তব্য এবং দরপত্রের নথির মধ্যে বেশ কিছু অসংগতি আছে। এ ছাড়া রামপালের জন্য যে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ প্রকল্পটিতে বাজারে সহজলভ্য ও সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি আনা হচ্ছে না। সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানও রাখা হচ্ছে না।

প্রতিনিধিদল ইউনেসকোর কাছে যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে যাচ্ছে সেখানে বলা হচ্ছে, রামপালে যে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে  তা সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে ৬৯ কিলোমিটার দূরে। আর সুন্দরবন সীমানার ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রর কারণে পানি বায়ু বা পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রর ধোঁয়ার প্রভাব সীমিত রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাধারণত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা ৫০০ ফুট হয়। কিন্তু রামপালে হবে ৯০০ ফুট।