রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত দরকার

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পর তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মঙ্গলবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, রূপপুর প্রকল্পের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়া ফিরিয়ে না নিলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হবে। কারণ, এই বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পের যেকোনো পর্যায়ে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির দায় নেয়াও সম্ভব নয়।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বিএইসি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, রূপপুর প্রকল্পের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে কি না, এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত না হওয়া দুশ্চিন্তার বিষয়।  শত শত বছর এই বর্জ্য বিশেষ ব্যবস্থায় বিশেষ স্থানে সংরক্ষণ করতে হয়।

তিনি বলেন, রূপপুরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আশপাশের ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার এলাকা থেকে সব মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে। তাঁদের দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে। তিনি বলেন, পারমাণবিক দুর্ঘটনার জন্য নির্মাণকারীদেরও দায়িত্ব নিতে হবে—এমন একটি আইন ভারত করেছে। এ রকম একটি সুরক্ষা আইন বাংলাদেশেরও করা উচিত। তিনি বলেন, ভারতের তামিলনাড়ুর কুদনকুলম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন দুটি ইউনিট (তৃতীয় ও চতুর্থ) স্থাপনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রতি কিলোওয়াট স্থাপন খরচ পড়বে তিন হাজার মার্কিন ডলার। রূপপুর প্রকল্পে এই খরচ পড়ছে সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার। যদিও কুদনকুলম কেন্দ্রটিতে ‘ভিভিইআর-১০০০’ রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে, আর রূপপুরে করা হচ্ছে ‘ভিভিইআর-১২০০’, তবু রূপপুরের ব্যয় অপেক্ষাকৃত বেশি।
গোলটেবিল আলোচনায় বিএইসির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ কাইউম বলেন,  কোনো দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করার জন্য যে রকম জনবল থাকা প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তা নেই। রূপপুর প্রকল্পকে সামনে রেখে জনবল তৈরির যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, তা-ও সন্তোষজনক নয়। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ৩০ বছর কাজ করে অবসর নেয়া বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন। নূরুল ইসলাম বলেন, রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী, যন্ত্রপাতি নির্মাণ ও সরবরাহকারী হচ্ছে রাশিয়া। প্রকল্পের সমীক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছুই করবে তারা। অথচ দুর্ঘটনার কোনো দায় তারা নেবে না।
রূপপুরে পানিস্বল্পতার কথা উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বলেন, সেখানে ‘ওয়াটার টাওয়ার’ করা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় পানির অভাব পূরণের জন্য। কিন্তু যদি কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন যে বিপুল পরিমাণ পানি দরকার হবে, তার উৎস কী হবে।
বিএইসির সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রেজাউর রহমান গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিনের স্বপ্ন থেকে এখন বাস্তবের একটি বিষয়।
গোলটেবিল আলোচনার প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রথম আলোর সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটি নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চায়। দেশবাসীর প্রত্যাশা হচ্ছে রূপপুর কেন্দ্রটি তেমন একটি নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে উঠুক।