শুধু উৎপাদন নয় অন্যখাতেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচের পরামর্শ

শুধু উৎপাদনে নয় অন্যখাতেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচ করার পরামর্শ এসেছে। তবে বিউবি চায় শুধু তাদের নিজস্ব উৎপাদনেই এই অর্থ খরচ করতে। ভোক্তার অর্থ, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করেই এই অর্থ খরচ করার পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।
বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল সম্পকিত রেগুলেটরি গাইড লাইন ২০১৭ এর খসড়ার চূড়ান্ত করা বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা একথা বলেন। বৃহষ্পতিবার বিয়াম মিলনায়তনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালা উদ্বোধনীতে বিদ্যুৎ জালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, তহবিলের অর্থ উৎপাদন ছাড়াও অন্যখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জালানি, কয়লা, জমি উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা সহ বিভিন্ন খাতে এখান থেকে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এখন যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে তার ৭০ ভাগ ২০৪১ সালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এখনই আবার পরিকল্পনা করতে হবে। এরজন্যও তহবিল করা দরকার। এই তহবিল থেকেও সেখানে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পিডিবিকে হোল্ডিং কোম্পানি করার মতামত মন্ত্রনালয়ে এসেছে। চলতি মাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, তহবিলকে আমরা সহজ করবো। সহজ সরল ভাবে যাতে এই তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে। ভোক্তার উপর যাতে কোন চাপ না আসে সে দিকে খেয়াল রাখা হবে। চূড়ান্ত করার আগে প্রয়োজনে আরও আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে গণশুনানী করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সম্পর্কিত মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুৎখাতের যেখানে অর্থ পাওয়া যায় না সেখানে এই তহবিলের অর্থ খরচ করা যেতে পারে। তহবিল পরিচালনার জন্য এখনই পরামর্শ নিয়োগ না দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, যথাযথভাবে প্রকল্প বাছাই করে করতে হবে। এই অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ রাখা যেতে পারে। তহবিল খরচের বাছাই কমিটিতে বিদ্যুৎ সচিবকে না রেখে বিভিন্ন পেশাজীবি প্রতিনিধি রাখা যেতে পাওে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, একক ক্রেতা হিসেবে তহবিল থেকে খরচর করার ক্ষেত্রে পিডিবিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ক্যাব এর উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করেই এই তহবিলের অর্থ খরচ করতে হবে। বিদ্যুতের দাম সহনীয় রাখার জন্য শুধু উৎপাদনেই এই তহবিলের অর্থ খরচ করতে হবে।
বিইআরসি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সেলিম মাহমুদ বলেন, উৎপাদনের মত সরবরাহ খাতের জন্যও এমনই আর একটা তহবিল করা যেতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের সদস্য খন্দকার মোকলেসুর রহমান বলেন, যে প্রকল্পে এই অর্থ খরচ করা হবে তা বিইআরসি থেকে ভালভাবে যাচাই করতে হবে।
বিইআরসি সদস্য (বিদ্যুৎ) প্রকৌশলী মিজানুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম সহনীয় রাখতেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিইআরসি সদস্য আজিজ খান,  সদস্য প্রকৌশলী রহমান মোরশেদ, স্রেডার চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনসহ অন্যরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলে এখন ছয় হাজার কোটি টাকা আছে। ২০১১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে এই তহবিল গঠন করা হয়। ভোক্তা থেকে যে বিদ্যুতের দাম নেয়া হয় তার একটি অংশ নিয়ে এই তহবিল গঠন করা হয়। পাইকারি পর্যায়ে যে দামে বিদ্যুৎ বিক্রি হয় তার ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ করে রেখে এই তহবিলে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ রক্ষাবেক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল করা হয়। এই তহবিল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২৫৭ কোটি টাকা ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকার মধ্যে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং এক হাজার ২০০ কোটি টাকা নর্থ ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশনের পায়রার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দেয়া হয়েছে। চীনের সাথে যৌথভাবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে।
যখন তহবিল করা হয়েছিল তখন শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই এই তহবিল খরচ করার কথা ছিল।