শেভরণের সম্পদ বিক্রি হচ্ছে চীনের কাছে: চুক্তির ঘোষনা

বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রির আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দিল আমেরিকার কোম্পানি শেভরণ বাংলাদেশ। আর এই সম্পদ কিনতে যাচ্ছে চীন। চীনের হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লি.।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে সব গ্যাস ক্ষেত্র এখন থেকে আমেরিকার পরিবর্তে চীনের কোম্পানি নিয়ন্ত্রন করবে।
হিমালয় এনার্জির সাথে চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে আজ সোমবার শেভরণ বাংলাদেশ জানিয়েছে।

হলিআর্টিজানে হামলার কিছুদিন পর অক্টোবর মাসে শেভরণ বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করে বলে জানা যায়। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়। তখন শেভরণ কর্তৃপক্ষ এনার্জি বাংলাকে জানিয়েছিল, চীনের জিনহুয়া কোম্পানির সাখে সম্পদ বিক্রির বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে। সেসময় জিনহুয়া ওয়েল এর মুখপাত্র ঝ্যাং শিয়াওদি রয়টার্সকে জানিয়েছিল, শেভরণের সম্পদ কেনার জন্য বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে।
তবে পেট্রোবাংলা এবিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শেভরণের ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, পেট্রোবাংলা শেভরণের অন্যতম অংশীদার। নিয়ম অনুযায়ি যথাসময়ে এবিষয়ে পেট্রোবাংলাকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রয়টার্সকে জানিয়েছে, শেভরনের সম্পদ কিনে নেয়া বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে কি না, তা এখনও যাচাই করে দেখছে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি। পরামর্শকের প্রতিবেদন হাতে আসার আগে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সে পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। আশা করব, আমাদের অনুরোধ শেভরন রাখবে।

সূত্র জানায়,  শেভরণ এর সকল সম্পদ এবং দায় কিনে নিচ্ছে হিমালয়। এখন থেকে বাংলাদেশের তিনটা গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ থেকে গ্যাস উত্তোলন ও ক্ষেত্র পরিচালনা করবে হিমালয় এনার্জি।
বর্তমানে প্রতিদিন মোট গ্যাস উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক এই তিন ক্ষেত্র থেকে আসে।

উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ি বাংলাদেশ থেকে বিদেশী কোন কোম্পানি তাদের সম্পদ অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারে। তবে পেট্রোবাংলার অনুমোতি নিতে হবে।

বাংলাদেশ  শেভরণের সম্পদ কিনতে চাইলেও সে বিষয়ে  উদ্যোগের কোন অগ্রগতি হয়নি। শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার বিষয়ে পেট্রোবাংলাই অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা।  শেভরণের সম্পদ কেনার জন্য পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছে বলে জানা গেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক জ্বালানি উপদেষ্টা উড ম্যাকেঞ্জিকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছিল। তাদের শেভরনের সম্পদ মূল্য নিধারণ ও ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখার কথা ছিল।

গতবছর অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা জানায় শেভরন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হয়েছে – এমন কথা বলে বাংলাদেশসহ ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায় শেভরণ।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়,  শেভরণের গ্যাসের উৎপাদন গত দুই বছর কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেভরণ প্রায় চার হাজার ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস পেট্রোবাংলাকে বিক্রি করেছে। যা ২০১৫-১৬ সালে এসে কমে হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এই তিন গ্যাসক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ১৯ শতাংশ। এ তিনক্ষেত্র ২০১৪ সালে শেভরণ খরচ করেছে ৪১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে করেছে  ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০১৩ সালে খরচের পরিমান ছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে দুই বছরে বাংলাদেশে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

চীনের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে পর এটাই বড় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে চীনের। এদিকে চীন থেকে বিদ্যুৎ আমদানিরও চিন্তা করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে চীন বাংলাদেশ যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। সব দিলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে চীন বড় অংশীদার হতে যাচ্ছে।