সমুদ্রসীমা জয়ের পর গ্যাস রপ্তানির সুযোগ দিয়ে পিএসসি

সমুদ্রসীমা জয়ের পর গ্যাস রপ্তানির সুযোগ দিয়ে পিএসসি করল পেট্রোবাংলা। কোন প্রতিযোগিতা ছাড়াই এই সুযোগ দেয়া হলো।রপ্তানির সুযোগ দিয়ে গভীর সাগরের ১২ নম্বর ব্ল­কে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে  কোরিয়ার পোসকো দাইয়ু কর্পোরেশনের সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করল পেট্রোবাংলা।
সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর এই প্রথম তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হলো। আর এটাই প্রথম প্রতিযোগিতা ছাড়া  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আইন ২০১০ এর আওতায় এই গ্যাস ব্লক ইজারা দেয়া হলো।
আজ মঙ্গলবার বিকালে পেট্রোসেন্টারে এই চুক্তি করা হয়েছে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম,  জ্বালানি সচিব মো. নাজিমউদ্দিন চৌধুরী, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান  আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, এনডিসি, দক্ষিন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হান সঙ দো, দেইয়ু এর প্রধান নির্বাহি ইয়াং স্যাঙ কিম উপস্থিত ছিলেন।

pb energy bangla
চুক্তিতে সই করেন জ্বালানি বিভাগের উপ সচিব খাদিজা নাজনীন, পেট্রোবাংলার পক্ষে পেট্রোবাংলার সচিব সৈয়দ আশফাকুজ্জামান এবং দেইয়ু ভাইস প্রেসিডেন্ট সি বো জো।
তৌফিক ই ইলাহী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় বিদেশি্ কোম্পানিগুলো তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করতেই পিএসসি সংশোধন করে গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এটি শুধূ কোম্পানির অংশের গ্যাস। তারা এই গ্যাস বিক্রি করতে পারবে। রপ্তানির আগে প্রথমে পেট্রোবাংলাকে প্রস্তাব দিতে হবে। তারা না কিনলে  দেশের মধ্যের কোম্পানিগুলোর কাছে প্রস্তাব দিতে হবে। তা্ও যদি না হয় তাহলেই তারা গ্যাস বিদেশের বিক্রি করতে পারবে।
নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হ্ওয়ার কোনো কারন নেই। ভবিষত চাহিদা পুরণে সরকার ব্যপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রের অন্যব্লকগুলো্ও দুই এক বছরের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সমুদ্রের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য জরিপ জাহাজ কেনা হবে।
কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভাল। উপকূলীয় এলাকার সম্পদের দিক থেকে কোরিয়া ও বাংলাদেশের অবস্থান একই রকম। বাংলাদেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে এই সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
পিএসসি অনুযায়ি, সমুদ্রের তিন হাজার ৫৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অনুসন্ধান করবে দাইয়ু।  তিন হাজার ২৮০ ফুট থেকে ছয় হাজার ৫৬০ ফুট গভীরে এই অনুসন্ধান করা হবে।
গ্যাস পাওয়া গেলে প্রথমে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৭০ ভাগ করে খরচের টাকা তুলে নেবে দাইয়ু।
অনুমোদিত মডেল পিএসসি অনুযায়ী প্রাথমিক মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে প্রথম দুই বছরে এক হাজার ৮০০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক ভূতাত্তিক জরিপ করবে। পরের বছর এক হাজার বর্গ কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক ভূতাত্তিক জরিপ করবে। এছাড়া চুক্তির চতুর্থ ও পঞ্চম বছর একটা অনুসন্ধান কূপ খনন করবে।
চুক্তি অনুযায়ি, এই ব্লকে কোনো গ্যাস পাওয়া গেলে দাইয়ু তার অংশ পেট্রোবাংলার কাছে প্রতি হাজার ঘনফুট সাড়ে ছয় ডলারে বিক্রি করবে।
১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে  আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে পেট্রোবাংলা। এতে কনোকোফিলিস ও স্টেট ওয়েল যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দেয়। কিন্তু পরে কনোকো এই ব্ল­কে কাজ না করার কথা সরকারকে জানায়। এজন্য এই ব্লকে প্রায় দুই বছর কোন কাজ হয়নি।
গত বছর ৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দাইয়ুর সঙ্গে চুক্তি করার অনুমোদন দেয়। এরপর গত ৭ই ডিসেম্বর অনুস্বাক্ষর করা হয়। জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা শেষে  মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেয়া হয়।
২০১৯ সালের প্রথম নাগাদ জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে এ ব্লকে তেল-গ্যাসের অবস্থান সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে বলে আশা করছে পেট্রোবাংলা।