সুন্দরবনের সংকটাপন্ন এলাকায় ১৯০ শিল্প প্রতিষ্ঠান

সুন্দরবন সংলগ্ন ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মধ্যে ১৯০টি বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ও প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু আছে। বন্ধ রয়েছে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টি ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত। আর ১০৩টি ‘কমলা-খ’ এবং ৬৩টি ‘কমলা-ক’ শ্রেণিভুক্ত। তবে এখানে ডাইং, ওয়াশিং বা ট্যানারির মত পরিবেশদূষণকারী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দাখিলকৃত এই প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৯ মে এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চারদিকে প্রথম পাঁচ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকার মধ্যেই বিচ্ছিন্ন লোকালয়, ছোট আকারের স্থানীয় বাজার রয়েছে। কিন্তু কোনো ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। আর ইসিএ এলাকায় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার অধিকাংশই মোংলা ইপিজেড ও মোংলা বন্দর শিল্প এলাকায় অবস্থিত। অন্যান্য কলকারখানা ও প্রকল্প বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার নয়টি উপজেলায় অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টি সিমেন্ট মিলস, সাতটি এলপিজি ও একটি গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, তিনটি তেল পরিশোধন, আটটি সুপারি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান, তিনটি ইটভাটা, দুটি জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, একটি সিগারেট কারখানা, সাতটি লবণ পানি শোধনাগার, ৭৩টি রাইস মিল ও ১৫টি স’ মিল রয়েছে। লাল ও কমলা শ্রেণিভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো বায়বীয়, তরল ও শব্দ দূষণ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন ইসিএ এলাকা ঘোষণার পূর্বেই ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে মোংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইপিজেডের বাইরে মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং মোংলাকেন্দ্রিক শিল্প অঞ্চলের বিস্তৃতি ঘটে। সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তের পর ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় হতে সরকার কর্তৃক সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চারদিকে দশ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে। পরিবেশ দূষণ যাতে ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে এবং এই অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য যাতে কোনো প্রকার নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে লক্ষ্যে এই ঘোষণা দেয় সরকার।

সুন্দরবনের আশেপাশে ১০ কিলোমিটারের (ইসিএ) মধ্যে থাকা শিল্প-কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের এপ্রিল মাসে হাইকোর্ট এক আদেশে সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন শিল্প-কারখানার অনুমোদন দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে বর্তমানে কতগুলো শিল্প-কারখানা রয়েছে তার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের এই নির্দেশ মোতাবেক সরেজমিন পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তর গতকাল হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসিএ এলাকার মধ্যে মোংলা ইপিজেড এলকায় ২১টি, মোংলা বন্দর শিল্প এলাকায় ২০টি, মোংলা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় চারটি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার অন্যান্য এলাকায় ১৪৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৮১টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিবেশগত এবং নয়টির অনুকূলে অবস্থানগত ছাড়পত্র রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশাল বিভাগীয় সুন্দরবন ইসিএ এলাকাধীন পিরোজপুর ও বরগুনা জেলায় লাল শ্রেণিভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এই দুই উপজেলায় ২৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইটভাটা, ছোট ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ, ভাসমান প্লাস্টিক বল তৈরি ও স’ মিল।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, লাল শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে রুল শুনানির সময় বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজন। তাহলে বেরিয়ে আসবে এসব প্রতিষ্ঠান কতটুকু ক্ষতিকর।

রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারী। বাকি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাবও মারাত্মক। ফলে আইনানুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের সেখানে থাকার কোনো বৈধতা নেই।