সৌর বিদ্যুতের চুক্তি বাতিল হচ্ছে: বেশিরভাগ উদ্যোক্তা কাজই শুরু করেনি

পরমাণু শক্তি কমিশন কার্যালয়ের সামনে সৌর প্যানেল

সময়মত যেসব উদ্যোক্তা সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে পারেনি তাদের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু কোম্পানিকে সর্তক করে নোটিশ দেয়া হয়েছে। অন্যদেরও চিঠি দেয়া হবে। তারপরই চুক্তি বাতিল করা হবে।
বিদ্যুৎবিভাগ সূত্র জানায়, বেসরকারি বেশিরভাগ উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি। এখন সরকার এসব বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অবস্থার প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিদ্যুৎবিভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থা ভালো না। বেশিরভাগ কেন্দ্রর কাজই এখনও শুরুই হয়নি।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় তারা যেন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে, সে বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছিল। এখন বিভিন্ন অজুহাতে তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কিছু কোম্পানির কাজের অগ্রগতি বিবেচনা করে সময় বাড়ানোর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাকিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হতে পারে। কারণ, এই সময় বসে থাকার চেয়ে নতুন করে চুক্তি করা ভালো। এতে কাজের গতি বাড়বে। তবে এক্ষেত্রে তাদের কিছুটা সময়ও দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে ৫০ মেগাওয়াট, টেকনাফে ২০০, সুমানগঞ্জের ধর্মপাশায় ৩২ , কক্সবাজারে একটা ২০০ ও একটা ২০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ৫০, রংপুরে ৩০, গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কোনও অগ্রগতি নেই।
এদের মধ্যে কক্সবাজারের ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের কাজ চলছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এটা চালু হতে পারে। এছাড়া দুটো কেন্দ্র বাস্তবায়নকারী কোম্পানি সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। দুটো কোম্পানিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাকিগুলোর কোনও কাজই শুরু হয়নি।
এরই মধ্যে সরেজমিন কেন্দ্রের বাস্তবায়ন এলাকাও পরিদর্শন করা হয়েছে। এলাকায় মালামাল না দেখলে এসব উদ্যোক্তাকে কাজ করতে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা যায়, এর মধ্যে শুধু টেকনাফে বাস্তবায়নাধীন ৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রর মালামাল এসেছে।
সুনামগঞ্জের ৩২ মেগাওয়াট কেন্দ্র স্থাপন করবে এডিসন-পাওয়ার পয়েন্ট অ্যান্ড হাওড় বাংলা-কোরিয়া গ্রিন এনার্জি লিমিটেড। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এটা চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখন সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। কক্সবাজারের ২০ মেগাওয়াট কেন্দ্র জৌলাস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল) স্থাপন করবে। চলতি মাসের ১২ তারিখে উৎপাদনে আসার কথা। তবে এ কেন্দ্রের এখনও অবকাঠামো স্থাপনের কাজ চলছে। ময়মনসিংহে  করবে এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেড। এ বছরের ৮ই এপ্রিল উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু এখনও কোন কাজ শুরু না হওয়ায় কোম্পানিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র স্থাপন করবে সান এডিসন এনার্জি হোল্ডিং। আগামী ৮ই জুলাই তাদের উৎপাদনে আসার কথা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করার কারণে তাদেরকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এডিসন সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও তা বাতিল করা হয়েছে। রংপুর ৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্র যৌথভাবে স্থাপন করবে ইন্ট্রাকো সিএনজি ও জুলি নিউ এনার্জি কোম্পানি। এ বছরের ২৬ শে নভেম্বর এই কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও কাজ শুরু করতে পারেনি। গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রে কোনও কাজ শুরু হয়নি। তাদের উৎপাদনে যাওয়ার কথা আগামী বছরের ২৫ শে এপ্রিল।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ (এসডিজি) অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অন্তত ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা। এতে দুই হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হতে হবে। কিন্তু উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতায় সে লক্ষ্ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।