৫০ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়

গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল এজ সকালে। আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা ছিল দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র শৈত্য প্রবাহের মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি, ডিমলায় ছিল ৩ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ দশমিক ১, দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। বাংলাদেশে তাপমাত্রা এত কমে যাওয়ার নজির সেখানে আর নেই।

তিনি জানান, এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটাই ছিল এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন।

২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি সৈয়দপুরের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল; কিন্তু সম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের কোথাও থার্মোমিটারের পারদ ৩ ডিগ্রির নিচে নামেনি।

পৌষের দ্বিতীয়ার্ধে এসে গত ৪ জানুয়ারি থেকে দেশের ছয় বিভাগের ওপর দিয়ে এই শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শুরুতে এর মাত্রা মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হলেও শনিবার রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে।

তাপমাত্রা ৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এলে আবহাওয়াবিদরা একে বলেন তীব্র শৈত্য প্রবাহ। আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে এখন তীব্র শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আর শ্রীমঙ্গল ও সীতাকুণ্ড অঞ্চলসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী, রংপুর খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ।

আবদুল মান্নান বলেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই বলয়ের নিম্ন স্তরে বায়ু প্রবাহ বেশি থাকায় শীতের তীব্রতা এবার বেশি।

বাংলাদেশে শীত যে এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি অনুভূত হবে- সে পূর্বাভাস আগেই দিয়েছি আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যে রেকর্ড ছাড়িয়ে নেমে যাবে, তা তারাও আঁচ করতে পারেননি বলে জানান মান্নান।

আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকবে। এ সপ্তাহের শেষ দিকে রাতের তাপমাত্রা বেড়ে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমে আসতে পারে।

শীত মৌসুমে প্রতিদিনই মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। সোমবারের আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশের কোথাও কোথাও কুয়াশার দাপট দুপুর পর্যন্ত চলতে পারে।

এদিকে টানা পাঁচ দিনের শৈত্য প্রবাহে দেশের উত্তরাঞ্চলের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ।

নীলফামারি, দিনাজপুর, পাবনা ও রাজশাহী থেকে জানানো হয়েছে,  জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সকালের দিকে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। বেলা ১১টা পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট ফাঁকাই দেখা যাচ্ছে। স্কুল কলেজেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।

ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।

শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধদের ভিড় বেড়েছে উত্তরের জেলাগুলোর হাসপাতালে। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পাবনা সদর হাসপাতালে দুই শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্ককাইটিস ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে।