রামপাল: বারবার পেছানো হচ্ছে দরপ্রস্তাব
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী কোম্পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করেও তেমন সাড়া নেই। তাই বার বার পেছাতে হচ্ছে দরপ্রস্তাব জমার সময়। নতুন করে এই সময় দুই মাস বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয় হবে বলে কয়েকটি ব্যাংক বিনিয়োগ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। নরওয়ে ও ফ্রান্সের কয়েকটি ব্যাংক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অর্থায়ন করবে না বলে জানিয়েছে। অবশ্য এসব ব্যাংক বাংলাদেশে এর আগে কখনও কোন শিল্পে বিনিয়োগ করেনি। তবুও ঐ ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্তের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়তে যাচ্ছে রামপাল। ঐ ব্যাংকগুলোর এমন সিদ্ধান্তের কারণে যারা নিয়মিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে থাকে তারাও সর্তক হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাংক ঋণের অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আর ব্যাংক ঋণের অনিশ্চয়তার কারণে সন্তোষজনক আগ্রহী কোম্পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
যে গুটিকয়েক কোম্পানি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগে এখনও আগ্রহী তারা দরপ্রস্তাব জমার সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আবারও দুই মাস সময় বাড়ানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য দরপ্রস্তাব আহবান করা হয়। ১৮ মে ছিল জমার শেষ দিন। পরে সময় বাড়িয়ে তা ১৮ জুলাই করা হয়। নতুন করে আরও দুই মাস সময় বাড়ানো হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত ভারতীয়, চায়না ও কোরিয়ান কয়েকটি কোম্পানি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু তবুও তারা আরও সময় চায়। এপর্যন্ত ছয়টি কোম্পানি দরপ্রস্তাব কিনেছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে দুটি কোম্পানি ভারতের। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চিনের কোম্পানি দরপত্র কিনেছে। সূত্র জানায় এসব কোম্পানি দরপ্রস্তাব কিনলেও ভারতীয় ঐ দুই কোম্পানিই কেন্দ্র স্থঅপনে বেশি আগ্রহী।
এদিকে বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য কোরিয়াতে যে রোড শো করার কথা ছিল তাও পেছানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। কয়েকটা কোম্পানি দরপ্রস্তাবে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আবার একই সাথে কয়েকটি ব্যাংক বিনিয়োগ করার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করছে। তবে এই কেন্দ্র স্থাপনেও সরকার অনেক সাবধনতা অবলম্বন করছে। পরিবেশের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে দিকে পুরো সর্তক থাকা হচ্ছে। বিনিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রামপালে বিনিয়োগে সমস্যা হবে না। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পাওয়া যাবে।
ফ্রান্সের তিনটি ব্যাংক- ত্রেক্রডিট এগ্রিকোল, সোসিয়েতে জেনারেলি ও বিএনপি পারিবাস ব্যাংক সম্প্রতি এই কেন্দ্রে বিনিয়োগ করবে না বলে জানিয়েছে। এরআগে গত বছর ডিসেম্বরে রামপাল প্রকল্প নিয়ে নরওয়ের সরকারি পেনশন ফান্ডের বৈশি^ক বিনিয়োগ নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল কাউন্সিল অন এথিকস অব নরওয়ে। সেই মূল্যায়নে এই কেন্দ্রে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
ব্যাপক আলোচনার কারণে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষন করাতে সরকার গত এপ্রিল মাসে ইউনেস্কো প্রতিনিধিকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনে আহবান জানায়। সরকার ইউনে্স্কোকে রামপাল এবং সুন্দরবনের সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণের আহবান জানায়। সে আহবানের প্রেক্ষিতে ইউনেস্কো রামপাল এলাকা পরিদর্শে আসবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডসিপ কোম্পানি (বিআইএফপিসি) রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম থেকেই এই কেন্দ্রর বিরোধিতা করে আসছে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সম্প্রতি সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল অভিযোগ করে বলেছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ৫৯টি শর্ত ভঙ্গ করে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে।