জ্বালানিখাতে সুখবর নেই
জ্বালানি খাতে সুখবর নেই। নিকট ভবিষ্যতে বড় ধরণের প্রাথমিক জ্বালানি সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে দেশ। গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। কয়লা তোলার উদ্যোগ নেই। আমদানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হচ্ছে। আর তাই দিন দিন জ্বালানি খরচও বাড়তে থাকবে।
এই অবস্থায় প্রতিবছরের মত ‘সাশ্রয় কর জ্বালানি, বাচাঁও সম্পদ বাঁচাও ধরণী’ -প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৯ আগষ্ট পালন করা হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে জ্বালানি বিভাগ র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
দেশে যে গ্যাস মজুদ আছে তা বর্তমান ধারাবাহিকতায় উৎপাদন করলে আগামী ১৬ বছরে শেষ হয়ে যাবে। কয়লা মজুদ আছে অনেক। প্রায় ৭০ টিসিএফ গ্যাসের সমান। যা দিয়ে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে ৫০ বছর চাহিদা মেটানো যেতে পারে। কিন্তু কয়লা তোলা নিয়ে নানা মতভেদ তৈরী হওয়ায় সরকার এখন খনি উন্নয়ন থেকে সরে এসেছে।
তাই জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় সে উদ্যোগ খুবই কম। বাংলাদেশে শতকারা ৮০ ভাগ গ্যাসই বিদ্যুৎ ও শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হয়। আবাসিক ও অন্যান্যখাতে মাত্র ২০ ভাগ। কিছু অংশ তরল গ্যাস এখনই আমদানি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। প্রয়োজনীয় তেলের ৯৫ ভাগই আমদানি করা হয়। আমদানি করা তেলের সিংহভাগই ব্যবহার হয় পরিবহনে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম হওয়াতে গত প্রায় এক বছর এই খাতে লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জ্বালানি বিভাগের সাফল্য নেই বললেই চলে। দেশের খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে আসেনি সন্তোষজনক সুখবর। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকায় থাকলেও পিছিয়ে পড়েছে এলএনজি র্টামিনাল নির্মাণ কাজ। দীর্ঘ সময় ঝুলে আছে তেল শোধনে নেয়া ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের কাজ।
বিদ্যুৎ, সারকারখানা, শিল্প, সিএনজি এবং আবাসিকখাতে গ্যাসের সংকট কাটেনি। আগের মতোই এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ালে সার কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। আর সার কারখানা চালু করলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়। শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হলেও চাপ কম থাকায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। সিএনজিতে রেশনিং চলছে সারা বছরই। আর আবাসিক খাতে গ্যাস সংকট যেন কাটছেই না।
এমনই অবস্থায় পালন করা হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের এই দিনে অর্থাৎ ৯ আগষ্ট নেদারল্যান্ডের শেল অয়েল কোম্পানীর কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নেন। জ্বালানি নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণে রাখতে ২০১০ সাল থেকে এই দিনটিকে জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
তিতাস, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, বাখরাবাদ ও কৈলাশটিলা এই পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মাত্র ৪০ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড দিয়ে কিনে নেন। শেল কোম্পানি এসব ক্ষেত্রর মালিক ছিল। এসব ক্ষেত্রর গ্যাস থেকে বর্তমানে মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে।