আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব!

গ্রাহক পর্যায়ে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বুধবার এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে আরইবি। আরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিটি কমিশনে পৌঁছেছে বলে বিইআরসি’র সূত্র এ নিশ্চিত করেছে।

আরইবি বলছে, বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণার সময় একটি ধাপের ইউনিট প্রতি (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) দাম কমানো হয়েছে। অন্যদিকে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর হয়েছে। এতে বছরে ৯০২ কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।

খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, এমনিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলে দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম। এছাড়া জ্বালানি তেল বিক্রি করে সরকার বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা লাভ করছে। সেখানে নতুন ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যৌক্তিক হয়নি। কারণ নতুন ট্যারিফ কাঠামোর কারণে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলোর বছরে আয় বাড়বে ৭১৬ কোটি টাকা।

তারা বলছেন, আবার দাম বাড়ানো প্রস্তাব গ্রামের গরীব জনগণের জীবন যাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলবে।

গত ২৭ আগস্ট বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার ঘোষণা করে বিইআরসি। যা গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের (লাইফ লাইন) ক্ষেত্রে মূল্য হার অপরিবর্তিত রেখে শহর ও গ্রামের সব গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে পাইকারি পর্যায়ে (বাল্ক ট্যারিফ) ২৩ পয়সা দাম বৃদ্ধি করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন মূল্যহার ঘোষণার সময় আরইবির ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের মূল্য ৩ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।  প্রতি ইউনিটে কমেছে সাত পয়সা। যদিও অন্য কোম্পানিগুলোর একই ধাপের ব্যববহারকারীদের ইউনিট প্রতি দাম ২৭ পয়সা বাড়িয়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়। সারাদেশে এক মূল্যহার করতে এই ধাপে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের দাম কমানো হয়েছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, সর্বশেষ ঘোষিত ট্যারিফ অনুযায়ী শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত লাইফ লাইন ব্যবহারকারী গ্রাহক এবং সেচের ক্ষেত্রে খুচরা মূল্যহার অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু পাইকারি মূল্যহার বেড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৩০ লাখ লাইফ লাইন ট্যারিফের আওতাভুক্ত। ৫০ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী ৪৫ লাখ। সেচ গ্রাহক রয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার।  এই তিন শ্রেণীর গ্রাহক মোট বিদ্যুতের ৩৮ ভাগ ব্যবহার করে।

বিদ্যুতের মূল্য পুনঃনির্ধারণের ফলে আরইবিকে গড়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ ২৫ পয়সা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এর ফলে আগের তুলনায় বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৫৪১ কোটি টাকা। আবার একটি ধাপে দাম কামানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরে মোট লোকসান হবে ৯০২ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা।

আরইবি বলছে, নতুন ট্যারিফ কাঠামোর ফলে বিদ্যমান ৭৭টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে লাভজনক ২২ সমিতির ৫টি লোকসানে পড়বে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ৫৫টি সমিতির অবস্থা আরো খারাপ হবে। এতে ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার সরাকরি পরিকল্পনা বাস্তবায়নও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘কমিশন আরইবির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখবে।’