আবাসিকে গ্যাস নিয়ে দ্বৈতনীতি
আবাসিক গ্যাস ব্যবহার বিষয়ে দ্বৈতনীতিতে চলেছে সরকার। বৈষম্য কমাতে চেয়ে আরও বাড়ানো হচ্ছে। পাইপ লাইন এবং সিলিন্ডার ব্যবহারকারিদের গ্যাসের দামের পার্থক্য আছে কয়েকগুণ। এই পার্থক্য আরও বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে সিলিন্ডার গ্যাসের উপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে এলপিজি’র দাম পাঁচ শতাংশ বাড়বে। এতে আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারিদের বৈষম্য আরও বাড়বে। দুই গ্রাহক দুই দামে জ্বালানি ব্যবহার করছেন। এই বৈষম্য আরও বাড়বে।
আবাসিকে আর নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এজন্য বলা হচ্ছে, তরল বোতল গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমানো হবে। কিন্তু দাম না কমিয়ে বরং শুল্কারোপ করে বাড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি দ্বৈতনীতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী তিন বছরের মধ্যে সাশ্রয়ীমহৃল্যে সারাদেশে এলপি গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন।
বর্তমান বাজারে এলপি গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সরকার নির্ধারিত দাম কেউ মানে না। এ দাম নিয়ন্ত্রণে বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে বাজেটে এলপি গ্যাসের সিলিণ্ডারের ওপর নতুন করে কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে অর্থমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এলপি গ্যাসের বেশিরভাগই আমদানি করা। এজন্য শুল্ক বাড়া মানেই দাম বাড়া। একদিকে সরকারি এলপি গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সিলিণ্ডার আমদানির ক্ষেত্রে নতুন করে করারোপ করা হয়েছে। এটা দ্বৈতনীতির সামিল। এতে বৈষম্য বাড়বে। সিলিণ্ডার গ্যাস ব্যবহারকারিদের বেশি দাম দিতে হবে।
সরকারি ভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কোম্পানিগুলো এলপিজি সরবরাহ করে। বেসরকারিভাবে বসুন্ধরা এলপিজি, পেট্রিগ্যাজ, যমুনা, টোটাল গ্যাস, অরিয়ন এবং বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি (বিওসি)সহ অনেকে বিক্রি করে। বর্তমানে বিপিসি অনুমোদিত ৪৪টি কোম্পানি বাজারে এলপিজি সরবরাহ করে। দেশে বর্তমানে প্রায় একশ কোম্পানিকে এলপিজি বোতল প্রক্রিয়া করার লাইসেন্স দেয়া আছে।
দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় তিন লাখ টন বোতল গ্যাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে সরকারিভাবে মাত্র ২০ থেকে ২২ হাজার মেট্রিক টন। বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে তা সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করে। বেসরকারিভাবে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন এলপি গ্যাস বাজারজাত করা হয়।
এলপি গ্যাস আমদানিতে বর্তমানে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং চার দশমিক পাঁচ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হয়। এখন পাঁচ হাজারের নিচের এলপি গ্যাস সিলি-ারের জন্য নতুন করে রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হবে।
এলপি গ্যাস বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শফির উদ্দিন বলেন, এটা দ্বৈতনীতি। একদিকে গ্রাহকের কাছে সহনীয় দাম রাখতে চাইছে। অন্যদিকে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এতে দাম কমবে না, বরং বাড়বে। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে এলপি গ্যাস পৌছানো কঠিন হবে। বেসরকারি কোম্পানি পেট্রিগ্যাস এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল জানান, বাজেটের এই প্রস্তাবের কারণে দাম আরও বেড়ে যাবে। এলপি গ্যাসের দাম কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছিলাম। এখন সেটা বেড়ে যাবে। সিলিণ্ডার আমদানির ক্ষেত্রে কর তুলে নিলে গ্যাসের দাম কমানো সম্ভব হতো। দাম সহনীয় রাখতে শুল্ক কমানো উচিত। তা না করে এখন সিলিণ্ডারের ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে।