উদ্ভট কথা বলে মানুষের জীবন নেওয়া হলো: প্রধানমন্ত্রী

সরকারের উন্নয়নে ‘বাধা সৃষ্টি’ করতে ‘উদ্ভট’ কারণ দেখিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “আজকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলেই আবার একদল আন্দোলনে নামে পরিবেশ রক্ষার নামে।

“কিছু কিছু উদ্ভট চিন্তাভাবনা এ দেশের মানুষের আছে। আমি জানি না- কীভাবে আসে!”

কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধনী  অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাঁশখালীর সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও প্রতিক্রিয়া আসে।

তিনি বলেন, “এ ধরনের উদ্ভট কথা বলে অযথা কিছু মানুষের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া হলো।… আমি জানি না, উদ্দেশ্যটা কী… আমি বলতে পারব না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যতো দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সবাইকে একটু স্বস্তি দিয়েছিলাম, এখন সেই উৎপাদনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা… অথচ এটা আমাদের উন্নয়নের জন্য দরকার। ”

বাঁশখালীর গণ্ডামারায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এস আলমের ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষের সমাবেশ নিয়ে গত ৪ এপ্রিল সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।

গণ্ডামারার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপ পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে। এস আলম গ্রুপের ‘ভাড়া করা সন্ত্রাসীরাই’ সেদিন সংঘর্ষের সময় গুলি শুরু করেছিল।

ওই ঘটনার পর শুক্রবার গণ্ডামারায় গিয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে রক্তক্ষয়ের জন্য ক্ষমতাসীন দল ও এস আলম গ্রুপকেই দায়ী করে।

জাতীয় কমিটি সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পেরও বিরোধিতা করে আসছে।

বাংলাদেশ সরকার রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে। পরের বছর অক্টোবরে দিল্লি গিয়ে ভারত সরকারকে রামপাল প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

ওই বিরোধিতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “সেটা আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতেই নাকি দেবে না।”

বিশেষজ্ঞদের একটি দল বলছেন, সুন্দরবনের এতো কাছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সমুদ্র, সংলগ্ন ভূমি ও ওই এলাকার আবহাওয়া হয়ে জীব বৈচিত্র্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মূলত কয়লা জ্বালিয়ে পানি উত্তপ্ত করে তাপ উৎপাদন করা হয়। সেজন্য প্রয়োজন প্রচুর কয়লা ও মিঠা পানি।

কয়লায় সালফার, কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন থাকে। কয়লা পোড়ার পর অবশিষ্ট হিসেবে থাকে সালফার ও ফ্লাই অ্যাশ। আর প্রচুর পরিমাণে উত্তপ্ত পানি (হট ওয়াটার)।

তবে বিশেষজ্ঞদের ওই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই এলাকার কোনো ক্ষতি হয়নি। সেখানে বরং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধান হচ্ছে, গাছপালা হচ্ছে, সব হচ্ছে, মানুষ বসবাস করছে।”

সম্প্রতি সুন্দরবনের শেলা নদীতে কয়লাবাহী কোস্টারডুবির ঘটনায় যারা পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কয়লার একটা কার্গো ডুবে গেলে নদীতে, আর কিছু লোক চিৎকার করল, পানি নাকি সব দূষিত হয়ে গেছে।”

শৈশবে কয়লার ওয়াটার ফিল্টার ব্যবহারের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি না, এটা সায়েন্টিফিক্যালি কতটা সত্য…কারণ আমরা ছোটবেলা থেকে দেখেছি, আমাদের বাড়িতে পানির ফিল্টার ছিল। সেই ফিল্টারের ওপরের স্তরে কয়লা থাকত।…

“কয়লা পানিকে দূষণমুক্ত করে। এখনো গ্রামে গঞ্জে এই ফিল্টার দিয়ে পানি দূষণমুক্ত করে। তাহলে এটা কী করে দূষিত হলো?”, প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।

তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট কারখানায় চলে যায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর সব দেশেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। অক্সফোর্ডেও আছে।”

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে ‘এসিড বৃষ্টি হবে’- এ ধরনের ‘উদ্ভট প্রচারও’ চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।