উপকূলে সুপেয় পানি: তবে তা ‘জলের মত’ সহজ নয়
অলীপ ঘটক, বাগেরহাট প্রতিনিধি, বিডিনিউজ
বাগেরহাটের উপকূলে সাংদিয়া নামের গ্রামে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন একটি পুকুর আছে। এটি শুধু ওই গ্রাম নয়, আশপাশের আরও দুই গ্রাম আফরা ও কলমীবুনিয়ার কয়েক হাজার মানুষের সুপেয় পানি সংগ্রহের উৎস।
এ পুকুরকে কেন্দ্র করে তিন কিলোমিটার দূরের কলমীবুনিয়া থেকে প্রতিদিন সাংদিয়ায় আসছেন শতশত মানুষ। যাদের অধিকাংশই হেঁটে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। যারা একটু স্বচ্ছল তারা হয়ত হেঁটে গিয়ে ভ্যানে করে পানি নিয়ে আসেন। কিন্তু যাদের সেই সামর্থ্য নেই তাদেরকে প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবেই যাওয়া আসা মিলে ছয় কিলোমিটার হাঁটতে হয়।
পানি সংগ্রহ নিয়ে নিত্যকার এ কষ্টের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন কচুয়া উপজেলার বাঁধাল ইউনিয়নের গ্রাম কলমীবুনিয়ার নজু শেখ। বলছিলেন, “আমাদের গ্রামে গভীর নলকূপ বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। জীবন বাঁচাতে আমাদের হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে আমাদের কষ্টের সীমা থাকে না।”
উপকূলীয় এ জেলায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শুধু কচুয়ায় নয় জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র। বাগেরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের কাছে দৈনন্দিন জীবনে সুপেয় পানি যেন রীতিমত এক জীবনের যুদ্ধ।
আফরা ও কলমীবুনিয়া গ্রামের মানুষের প্রতিদিন পানির জন্য মাইলের পর মাইল পাড়ি দেওয়া একটা উদাহরণ মাত্র। এরচেয়ে দূরহ ও কঠিন সময়ের মোকাবিলা করতে হয় তাদের।
বয়জ্যেষ্ঠরা বলছেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে করতেই অনেকের জীবনের বড় সময় কেটে গেছে। তবু পানির চাহিদা তাদের কাছে ‘জলের মত সহজ’ হয়নি এখনও। বরং আগামী দিনের উপকূলে আরও বড় ধরনের অশনি সংকেতের কথাই বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
বাগেরহাটে ১৬ লাখ মানুষের বাস; এর মধ্যে দক্ষিণের সাগরসংলগ্ন পাঁচ উপজেলায় রয়েছে প্রায় ১২ লাখ। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের কারণে এ পাঁচ উপজেলার সাত লাখের বেশি মানুষ যুগ যুগ ধরে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। কেউ কেউ তিন কিলোমিটার দূর থেকেও পানি সংগ্রহ করেন পরিবারের জন্য।
এখানে গভীর নলকূপ বলতে গেলে অকার্যকরই। অগভীর নলকূপের পানি পানের উপযুক্ত নয়। প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ক্রমেই প্রভাবশালীদের দখলে গিয়ে ভরাট হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে সরকারি উদ্যোগে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। তবে তা একেবারেই অপ্রতুল।
খুলনার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট-এসআরডিআই এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের উপকূলবর্তী শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ অঞ্চল লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এর ফলে যে শুধু মানুষের খাবারের পানির চাহিদার সংকট হচ্ছে তা নয়; বরং কৃষির সংকটও এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। ভালো জমিতে যেখানে ফসলের নিবিড়তা জায়গা ভেদে ৪০০ শতাংশও হয়; সেখানে উপকূলে তা মাত্র মাত্র ১৩৩ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত কুমার মল্লিক বলছিলেন, “বাগেরহাটের পাঁচ উপজেলায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ মানুষকে পিএসএফ, রেইন ওয়াটার প্রকল্পের মাধ্যমে পানির চাহিদা মেটানো হয়।
“বাকি সাড়ে সাত লাখ মানুষ সুপেয় পানির আওতায় বাইরে। তাদেরকে এর আওতায় আনতে নতুন করে পুকুর খনন ও রিজার্ভ ট্যাংকি বিতরণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তবে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে।”
ছয় কিলোমিটার হেঁটে সুপেয় পানি
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, কচুয়া ও রামপাল উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র। কচুয়ার কলমীবুনিয়া গ্রামে কথা হয় আবুল শেখের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গ্রামের অধিকাংশেরই পানি আনতে ছয় কিলোমিটার হাঁটতে হয়।
তাদের যেতে হয় গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরের সাংদিয়া গ্রামে, যেখানে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন একটি পুকুর আছে। সেখান থেকে পানি আনতে হাঁটতে হয় ছয় কিলোমিটার; কেননা কোনো বাহনে করে পানি পরিবহনের সামর্থ্য নেই বেশির ভাগেরই।
আবুল শেখ বলেন, “গ্রামের যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে তারা বাড়িতে পানি সংরক্ষণের জন্য রিজার্ভ ট্যাংকি বসিয়ে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি এবং গ্রীষ্মকালে পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে দিয়ে চাহিদা মিটিয়ে করে থাকেন।”
কলমীবুনিয়া গ্রামের অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গ্রামের যারা অত্যন্ত দরিদ্র তাদের পানির চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ ট্যাংকি সরবরাহ করা উচিত সরকারের।
সংকট কাটবে কবে, প্রশ্ন পঞ্চাশোর্ধ্ব গীতার
পঞ্চাশোর্ধ্ব গীতা হালদারের বাড়ি মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের কলাতলা গ্রামে। সেটি সুন্দরবনের ঠিক উত্তর পাশের পশুর নদীর তীরে। বছরের অন্যান্য সময় নদী, পুকুর বা বৃষ্টির পানি দিয়ে সুপেয় পানির অভাব পূরণ করতে পারেন। কিন্তু গ্রীষ্মকালটা তার কাছে সারা জীবনই ‘নরকের’ মতো।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গীতা বলছিলেন, আমরা সুন্দরবনের পাশে বসবাস করি। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পশুর নদের ওই পাড়ে সুন্দরবন। সুপেয় পানির জন্য নদী, পুকুর ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হয়।
“বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি। আবার বর্ষার সময়ে নদীর পানি মিষ্টি থাকে সেসময়ে তা তুলে ফিল্টার করে তা পানযোগ্য করতে হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম মৌসুমে নদী পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে করমজল এলাকায় মিষ্টি পানির একটি পুকুর রয়েছে, সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের জীবনে পানির কষ্টের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। সুপেয় পানির সংকট কিভাবে কাটবে তা আমাদের জানা নেই।”
কলাতলা গ্রামের মতো একই অবস্থা পাশের আমতলা, কেয়াবুনিয়া, সিঁন্দুরতলা ও কলাবাড়ি গ্রামের মানুষদের। এ পাঁচ গ্রামে সাত থেকে আট হাজার মানুষের বসবাস। সিঁন্দুরতলা গ্রামের কয়েক নারীও তাদের দৈনন্দিন জীবনে পানির কষ্টের কথা বলেন।
সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নওয়াপাড়া গ্রামে তিন হাজারের বেশি মানুষ পানির মধ্যে বসবাস করেন। গ্রামের চারদিকে নদী; যেদিকে তাকানো যায় পানি আর পানি। কিন্তু তা খাবারের অনুপযুক্ত; লবণাক্ত। গ্রামের প্রায় সব মানুষকেই মাইলের পর মাইল হেঁটে সুপেয় পানি সংগ্রহ করে প্রতিদিনের কাজ মেটাতে হয়।
তবে সম্প্রতি সেখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু বড় বড় ট্যাংকি স্থাপন করা হচ্ছে। এ দিয়ে কিছু মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মিটছে।
গোটাপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদ খন্দকার বলেন, “সুপেয় পানির সংকটে এই এলাকার মানুষ জর্জরিত। গভীর নলকূপ এখানে অকার্যকর। দুয়েকটি বসানো গেলেও তা আর্সেনিকযুক্ত। অনেক দূর থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করে আনতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের।”
রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমের প্রকল্প থেকে উপকার পাওয়ার কথা জানান।
কাজে আসছে সরকারি উদ্যোগ, তবে অপ্রতুল
উপকূলে সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম ও পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) অন্যতম।
পিএসএফের আওতায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পুকুরগুলোকে পুনঃখননের মাধ্যমে কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিনিপাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের মাধ্যমে মূলত পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে পানের উপযোগী করা হয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৭ সাল থেকে জেলায় ২০ হাজার ট্যাংকি স্থাপন করেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির আওতায় এসেছে। প্রতিটি ট্যাংকি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা করে। এতে প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ হাজার ট্যাংকি স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্প চালু হলে আরও দুই লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির আওতায় আসবে বলে আশা করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত কুমার মল্লিক বলেন, “এখানকার বেশিরভাগ উপজেলাতে ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্লোরাইড ও আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি হওয়ায় গভীর নলকূপ অকার্যকর।
“যে কারণে জনস্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে পরিবারভিত্তিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম কাজ চলমান রেখেছে।”
এতে উপকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নওয়াপাড়া গ্রামের সুবিধাভোগী সরোয়ার হোসেন, জামাল মিঞা ও রহিমা বেগম।
রহিমা বেগম বলছিলেন, “সরকারিভাবে ট্যাংক পাওয়ায় তাতে আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করছি। আমাদের সুপেয় পানির যে সংকট ছিল তা থেকে মুক্তি পেয়েছি। এই পানি দিয়ে এখন রান্না ও খাওয়ার কাজ ভালভাবে চলছে।”
চল্লিশোর্ধ্ব সরোয়ার হোসেন বলেন, “ট্যাংক আসায় সুপেয় পানির সংকট কিছুটা মিটেছে। আগে তো আমাদের পানির জন্য অনেক দূরে যেতে হত। পানি এনে কাজ সব কাজ চলত। এই এলাকার পানিতে লবণ, গভীর নলকূপ বসে না।”
উপকূলীয় এলাকা সুপেয় পানির সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা)।
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রতিনিধি মো. নূর আলম শেখ বলেন, “পাঁচ উপজেলায় গভীর নলকূপ একেবারেই বসে না। এসব এলাকার মানুষদের প্রাকৃতিক উৎসের পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে তো মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। পায়ে হেঁটে ও নৌকায় করে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে হয়।
“জলবায়ু সংকটের কারণে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। এরপর ঘূর্ণিঝড় আইলায় সকল সুপেয় পানির পুকুর জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়ার ফলে পানীয় জলের সংকট আরও বেড়েছে। ট্যাংক সরবরাহ আরও বাড়াতে হবে।”
গ্রামেও জমজমাট পানির ব্যবসা
সুপেয় পানির অভাবের কারণে শহরে তো বটেই গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে পানির ব্যবসা। ২০ লিটারের জারে করে পানি বিক্রি করছে জেলার অর্ধশতাধিক কোম্পানি। গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করে এ ব্যবসা করছেন কিছু মানুষ। তবে এগুলোর অধিকাংশেরই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। বাঁচার তাগিদে মানুষ মানহীন পানিই কিনে পান করছেন। শহরে ২০ লিটারের একটি জার ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। গ্রামেও দাম এর প্রায় কাছাকাছি।
বাগেরহাট জেলায় স্থানীয়ভাবে প্রথম দিকে পানির ব্যবসা শুরু করে নাফি ড্রিংকিং ওয়াটার নামে একটি কোম্পানিট। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে দাবি করে এটির কর্ণধার তালুকদার নাজমুল কবির ঝিলাম বলেন, “এখন জেলার বাইরে বিভিন্ন উপজেলাতেও অনেকে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির ব্যবসা করছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ এসব পানি কিনছে। অধিকাংশেরই সরকারি কোনো অনুমতি নেই। কিন্তু যেহেতু দিন দিন সুপেয় পানির চাহিদা বাড়ছে ফলে ব্যবসাও এখন বড় হচ্ছে।
তিনি জানান, আগে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, কচুয়া থেকে ডিলাররা তার কাছ থেকে জারের পানি নিতেন। এখন আর নেন না। কারণ সেসব এলাকায় এভাবে পানির ব্যবসা বেড়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই কেনা পানির উপর নির্ভর করেই বেঁচে আছেন কচুয়া উপজেলার রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের কৃষক আশেকে রসুল। তিনি কয়েকদিন পর পর তিন কিলোমিটার দূরের গোয়ালঘাট গ্রাম থেকে ২০ লিটারের দুটি পানির জার কিনে আনেন। তা দিয়েই মূলত পরিবারের সদস্যরা খাবার পানির চাহিদা মেটায়।
তিনি বলেন, “এটা আমার জন্য খুব কষ্টের, বাড়তি খরচ। কিন্তু করার তো কিছু নাই। পানি ছাড়া তো বাঁচতে পারব না। দু্টা জার ৭০-৮০ টাকা দাম নেয়। তারপর যাতায়াতের খরচও আছে। গরিব মানুষের জন্য এটা বোঝা।”
প্রকৃতির কাছেই ফিরে যেতে হবে
খুলনার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) এর লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় নদী-খাল যেগুলো ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলো অবশ্যই খনন করে সেখানে বর্ষাকালের পানি ধরে রাখতে হবে। সেটা দিয়ে খাবার পানির চাহিদা মিটবে আবার ফসলও করা যাবে।
তিনি বলেন, “লবণাক্ত মাটি থাকলেও আমরা মিষ্টি পানির উৎস তৈরি করতে পারি। যদি বর্ষাকালের মিঠা পানি ধরে রাখতে পারি; তাহলে সে পানি ব্যবহার করে ভালোভাবে লাভবান হতে পারি। এটাই সবচেয়ে বড় সমাধানের পথ। আমাদের প্রকৃতির কাছেই ফিরে যেতে হবে।”
রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম ভালো কাজ দিচ্ছে উল্লেখ করে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “এখন বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাটিতে লবণাক্ততার মাত্রা খুবই কম। কোথাও কোথাও কোনো লবণাক্ততাও থাকে না। এ বৃষ্টির পানি মাটির সব লবণাক্ততা অনেক নিচে নিয়ে চলে গেছে (লিচিং)। উপরে মিঠা পানির চাপ থাকলে লবণ আস্তে আস্তে নিচের দিকে চলে যায়, শুকনো সিজনে নিচের থেকে লবণ পানি উপরে চলে আসবে।
“প্রতি বছরই একই ঘটনা- বর্ষাকালে কোনো সমস্যা থাকে না। মূলত সমস্যাটা হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চের পরে। ওই সময়ে মাটি শোধন করা যায় না; কোনো প্রক্রিয়া করা যায় না। কোনোভাবে মিঠা পানির ব্যবস্থা করতে পারা গেলে তাহলেও এ লবণ মাটিতেও ফসল চাষ করা সম্ভব।”