উস্কে দিল মূল্যস্ফীতি
জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানোতে জীবন যাপনের খরচ যে আরও বাড়বে এতে সন্দহ নেই। শুধু বাড়বে না লাফিয়ে বাড়বে। যতটুকু প্রয়োজন তার থেকে অনেক বাড়বে। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সব পণ্য নাগালের বাইরে চলে যাবে।
এমনিতেই এখন সবকিছুর দাম বাড়ানোর একটা প্রতিযোগিতা চলছে, কিম্বা বলা যায় সবকিছু দাম বাড়িয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। তেলের দাম বৃদ্ধি সেই প্রতিযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
জ্বালানি জীবনযাত্রার খরচ বাড়ানোর ‘সংক্রামক’ পণ্য বলা চলে। একটার সাথে আর একটা যুক্ত। বছর না ঘুরতে এক লিটার ডিজেলে দাম বাড়ল ৪৯ টাকা। আগে ১৫ আর এখন ৩৪ টাকা। ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হল ১১৪ টাকা। ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর পরে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল তাই সামাল দেয়া দায় ছিল। এখন সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল।
সমস্যা হচ্ছে যে অনুপাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে সে অনুপাতে অন্য পণ্যের দাম বাড়ে না। অনুপাতটা অনেক হয়ে যায়।
গতবার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়েছিল। ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি ছিল; গাড়ির ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল ১০ শতাংশ। ভাড়া তো শুধু জ্বালানির উপর নির্ভর নয়। সেখানে বাসে আর লঞ্চে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ২৮ শতাংশ। এইবার যে ৪০ শতাংশ ডিজেলের দাম বাড়ল। তাতে আসলে বাস ভাড়া ১৬ শতাংশ বাড়ার কথা। কিন্তু তা কখনও হয় না। নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও তাই। নিত্যপণ্য পরিবহনে খরচ যতটুকু বাড়ে তার থেকে বেশি নেয়া হয়। এগুলোই আমাদের সমস্যা।
যখন সাধারণ মানুষের কিছু সহযোগিতা দরকার; মূল্যস্ফীতির ঊর্দ্ধগতি যখন অসহনীয়; জীবন যাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে; তখন অস্বাভাবিক হারে বাডানো হলো তেলের দাম। তখন তার খরচ আরও বাড়িয়ে দেয়া হল। এতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ বাড়ল। সাধারণ মানুষকে যে কষ্ট করে জীবন যাপন করতে হচ্ছে এখন তা আরও বেড়ে গেল। অস্থির পণ্যবাজারকে আরও অস্থির কওে দেয়া হল।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব নিন্মবিত্ত, নিম্মমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত অথবা নির্ধারিত আয়ের মানুষের উপর। এই শ্রেণির মানুষের কোন উপায় থাকবে না। তাদের আয় বাড়বে না কিন্তু খরচ বাড়বে।
এখন একটা দুর্যোগকালীন সময় যাচ্ছে। করোনার পর নতুন ধাক্কা সামাল দিতে হচ্ছে। সেই সময় এই চাপ সামাল দেয়া কঠিন হবে। আমাদের জিডিপি বেড়েছে। অথচ দুর্যোগে মানুষের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা যাচ্ছে না। উল্টো মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে।
বিপিসি লোকসানের ফর্দ তুলে ধওে বলছে, দাম বাড়ানো ছাড়া আর উপায় ছিল না। বিকল্প ছিল না। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে
পর্যায়ক্রমে জ্বালানির দাম বাড়ছেই। খরচ কমাতে গেলে যুদ্ধ থামানোর বিকল্প নেই। পৃথিবীর সব দেশের মতই বাংলাদেশও একটা চাপে আছে। পরিস্থিতি ভাল হলে এখানেও দাম সমন্বয় করা হবে। বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিপিসির লোকসান হয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। মূল্য বৃদ্ধির পর; প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকায় বিক্রি করেও ডিজেলে লোকসান হচ্ছে।
আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প আগেই হারিয়েছি। তাই এই অবস্থা। আগে থেকে যেসব উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল তা নেয়া হয়নি। তাই এখন সামাল দেয়া যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির এই বাজারে কর কমানো সহ অন্য কোনভাবে সাধারণ মানুষের উপর থেকে চাপ কমানো উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। সহনীয় পর্যায়ে দাম রাখতে অনেক দেশেই শুল্ক কমানো হয়েছে। এখানেও তা করা সম্ভব। কিন্তু করা হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েকদিন জ্বালানি তেলের দাম কমছে। সর্বোচ্চ দামের সময় আমরা পার করে এসেছি। তাই এখন দাম কমানো উচিত। তেল আমদানিতে ভর্তুকি তুলে নেয়ার সময় এখনও বাংলাদেশে হয়নি। তাই দাম যে পরিমানে বেড়েছে তা স্থির না রেখে কিছুটা কমানো উচিত। এজন্য বাজার বাজার পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নেই।
এমনিতেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। তাতে আরও কমবে। তাই এখনই দাম সমন্বয় করা উচিত।