এখন জ্বালানি তেলে ভর্তূকি নেই
জ্বালানি তেলে এখন ভর্তূকি নেই। বিশ্ববাজারে দাম কমার কারণে প্রতিটি জ্বালানি পণ্যে এখন লাভ হচ্ছে। ডিজেল কেরোসিন বিক্রি করে লাভ হচ্ছে। অকটেন পেট্রোলে আগে থেকেই লাভ ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এত কমেছে যে, আমদানি করা তেল বিক্রি করে লাভ হচ্ছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, ডিজেল ও কোরোসিনে লিটার প্রতি গড়ে এক থেকে দেড় টাকা, অন্যদিকে অকটেন ও পেট্রোলে প্রতিলিটারে গড়ে পাঁচ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে।
গত অর্থবছর বিপিসির ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল থাকলে এই অর্থ আর এবছর প্রয়োজন হবে না। চলতি অর্থবছরে জ্বালানি তেলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তূকি রাখা হয়েছিল। এই ভর্তূকি এখন আর প্রয়োজন নেই। জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কমে যাবে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ গড়ে ছয় টাকা। এটা কিছু কমে আসবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়াতে এখন আর বিপিসির কোন লোকসান নেই। সরকারের কাছ থেকে কোন ভর্তুকি নেয়া লাগবে না। তবে এই পরিস্থিতি কতদিন এভাবে থাকবে তা দেখার বিষয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে আবার ভর্তুকি প্রয়োজন হবে।
২০০৭ সালের দিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকলে দেশেও পর্যায়ক্রমে দাম বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে আবার তেলের দাম কমতে থাকলে অল্প কিছু দিন লাভ করতে থাকে বিপিসি। সে জন্য ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম সিদ্ধান্ত জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছিল। এরপর বিশ্ববাজারে তেলে দাম বাড়ার কারণে বেশ কয়েকবার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববাজারে পর্যায়ক্রমে তেলের দাম কমছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এখন জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে সবচেয়ে কম। এজন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কয়েক দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, বিপিসি’র এমনিতে লোকসান আছে। এর আগের বছরগুলোতে জ্বালানি বিক্রিতে ভর্তূকি দেয়া হয়েছে। এখন বিপিসির লোকসান কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্গানাইজেশন অব দ্যা পেট্রোলিয়াম এক্সপোট্রিং কান্ট্রিজ (ওপেক) সদস্য দেশগুলোর জ্বালানি তেলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমেরিকার শেল অয়েলের পর্যাপ্ত যোগানের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ছিল ১১১ ডলার। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তা হয়েছে ৬৮ দশমিক ২৪ ডলার। এখন আরও কমে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৫২ ডলার। এশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোর জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেও দাম কমছে। এ অবস্থায় ওপেক দেশগুলো জ্বালানি তেলের উৎপাদন অন্তত ৫০ ভাগ না কমালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসতে পারে। বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলারে উন্নীত করতে হলে দৈনিক উৎপাদন ১০ লাখ ব্যারেল কমাতে হবে। মূল তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব ওপেকের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। তারা ক্রমাগত তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাস্ট্রে শেল অয়েলের উৎপাদন এখন থেকে দৈনিক এক দশমিক ৬ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছে। সৌদি আরবের মতো আমেরিকাও তেলের উৎপাদন বাড়িয়েই চলেছে। সৌদি আরব এবং কুয়েতের সঙ্গে মিলিয়ে ইরানও বলছে তেলের দাম কমলে তাদের কিছু যায় আসে না। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক জ্বালানি রাজনীতি শুরু হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত গত আগষ্ট থেকে পেট্রোলের দাম সাতবার আর ডিজেলের দাম তিনবার কমিয়েছে । নভেম্বরের শুরুতেই পেট্রোলের দাম কমেছে দুই দশমিক ৪১ রূপি আর ডিজেলের দাম কমেছে দুই দশমিক ২৩ রূপি। আগস্ট থেকে ভারতের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে গড়ে নয় দশমিক ৩৬ রূপি।
তেলের দাম কমার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কমে যাবে। দেশে বর্তমানে তেল চালিত প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। উৎপাদন খরচ বেশি বলে একেন্দ্রগুলো পুরোপুরি চালানো হয় না। তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচও কমে গেল। এতে তেল চালিত সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সব সময় চালু রাখা সম্ভব হবে।
এদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে বলে দেশেও দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন।