এডিপি পর্যালোচনা: উৎপাদন ও বিতরণের চেয়ে পিছিয়ে সঞ্চালন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
উৎপাদন ও বিতরণের চেয়ে পিছিয়ে সঞ্চলন। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে থাকা সংস্থা এবং কোম্পানিগুলোর প্রায় প্রত্যেকেই শতভাগ এর কাছাকাছি খরচ করতে পেরেছে। কিন্তু পিছিয়ে আছে সঞ্চালন লাইন করার দায়িত্বে থাকা পিজিসিবি। বরাদ্দ থাকা অর্থের অনেকটাই খরচ করতে পারেনি পিজিসিবি।
২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দ থাকা অর্থের খরচ পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বরাদ্দ থাকা অর্থের এক টাকাও খরচ হয়নি এমন প্রকল্প যেমন আছে তেমন আছে বরাদ্দের পুরোটা খরচ করা প্রকল্পও।
সাতটি প্রকল্পে এক টাকাও খরচ হয়নি। তবে ২৩টি প্রকল্পে শতভাগ খরচ হয়েছে।
সংস্থা ও কোম্পানিভিত্তিক বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা পাওয়ার ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো), রুরাল পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড (আরপিসিএল), কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) বরাদ্দ থাকা অর্থের শতভাগ খরচ করেছে। এছাড়া নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেড (নেসকো) ৯৯ দশমিক ১৯ ভাগ, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৯৯ দশমিক ৩৭ ভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ৯৩ দশমিক ২৮ভাগ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লি. (এসিএসসিএল) ৯৮দশমিক ৫৩ ভাগ, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (নওপাজেকো) ৯৮ দশমিক ১৫ভাগ, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) ৯৩ দশমিক ২০ ভাগ অর্থ খরচ করেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ৮০ দশমিক ৯৮ ভাগ এবং বি-আর পাওয়ারজেন লি. ৮০ দশমিক ৭৭ ভাগ খরচ করেছে। বরাদ্দ থাকা অর্থ একেবারেই খরচ করতে পারেনি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি)। বরাদ্দ থাকা অর্থের মাত্র ২৩ ভাগ খরচ করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগে ২০২০-২১ অর্থ বছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ২৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ২২ টাকা বরাদ্দ ছিল। জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যয়ের শতকরা ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ আর সিলিং অনুযায়ী ব্যয়ের শতকরা ৯৭ দশমিক ৭৪শতাংশ খরচ হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৯৭টি প্রকল্প বাস্তাবায়ন করছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ ৮২টি, টি.এ ১০টি ও নিজস্ব অর্থায়নে ৫টি প্রকল্প।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এরমধ্যে জিওবি ও বৈদেশিক সাহায়তায় ৮টি, নিজস্ব অর্থায়নে ১৬টি ও জিডিএফ (গ্যাস উন্নয়ন তহবিল) ৬টি প্রকল্প। ২০২০-২১ অর্থ বছরের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে আরএডিপি বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বরাদ্দ থেকে বেশি খরচ হয়েছে। খরচ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অগ্রগতি ১০৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। যদিও আরএডিপি অনুমোদনের পর আরও ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি সন্তোষজনক। প্রত্যেকবছর যেন এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন হয় এবং বছর শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ মে মাসেই যেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় সেভাবে পরিকল্পনা করার তাগিদ দেন তিনি।
কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ ঢাকার ৬টি এলাকায় প্রিপেইড মিটার দেয়ার জন্য যে বরাদ্দ ছিল তা থেকে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পিডিবি ও ডিপিডিসি। মহেশখালী পাওয়ার হাব এর জন্য বরাদ্দ থাকা অর্থও খরচ হয়নি। বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ থাকা অর্থ খরচই হয়নি।
যে ২৩টি প্রকল্পে বরাদ্দ পুরোটা খরচ হয়েছে তাহলো, বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘোড়াশাল ৪র্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং, খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ গ্রাহক সংযোগ, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ভেড়ামারা (বাংলাদেশ) – বহরমপুর (ভারত) দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন (বাংলাদেশ অংশ) নির্মাণ, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও পূনর্বাসন, ডেসকো’র উত্তরা ও বসুন্ধরা ১৩২/৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানো, ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বাড়ানো, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ, সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ, রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংযোগ সড়ক ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ থাকা পুরো অর্থ খরচ হয়েছে।