এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ
তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতি মাসে অথবা তিন মাসে একবার পর্যালোচনা করে দাম ঠিক করবে। তেলের মতো সারাদেশে একদামেই এলপিজি বিক্রি হবে।
সারাদেশে এলপিজির অভিন্ন একটি মূল্য তালিকা করা হবে। প্রতি মাসে অথবা তিন মাসে একবার পর্যালোচনা করে দাম ঠিক করা হবে। স্টোরেজ ও সিলিন্ডারের দাম বছরে একবার ঠিক করে দেয়া হবে। আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব চূড়ান্ত করা হবে।
বিইআরসি জানিয়েছে, দেশে টনপ্রতি এলপিজি পরিবহন ব্যয় ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ। এ ব্যয় কমানো গেলে দাম কমানো সম্ভব। বড় জাহাজে এলপিজি আনতে হবে। এককভাবে না পারলে যৌথভাবে করতে হবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এলপিজির দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা। এখানে এলাকাভেদে তা সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা। এ ছাড়া ভারতে এলপিজির বিপণন ব্যয় কেজিতে ১৫ টাকা হলেও বাংলাদেশে তা ৩০ থেকে ৩২ টাকা। দেশে এলপিজি পর্যায়ে মূসক ৫ শতাংশ।
ভারতের হলদিয়া বন্দরে টনপ্রতি আমদানি ব্যয় ৬০ ডলার, যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১৩০ ডলার। মোংলা বন্দর দিয়ে ৩০ হাজার টনের এলপিজির জাহাজ আনা সম্ভব। এটি করা সম্ভব হলে দেশে এলপিজির পরিবহন ব্যয় টনপ্রতি ৮০ ডলারে নামিয়ে আনা সম্ভব।
এলপিজির দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত বিইআরসি আয়োজিত ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত উপস্থাপন করেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলপিজিতে ভর্তুকি দেয়া উচিত।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, বিপিসি এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করে। এটি বিইআরসির আইনের লঙ্ঘন।
এলপি গ্যাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও
ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী বলেন, এলপিজির ব্যবসার জন্য বিপিসিকে বছরে পাঁচ লাখ টাকা ফি দিতে হয়। এখন বিইআরসি চিঠি দিয়ে বলছে, তারা দাম ঠিক করে দিতে চায়। যেহেতু দু’পক্ষই অর্থ নিচ্ছে, সে জন্য বুঝতে পারছি না, এ খাতে প্রকৃত রেগুলেটরকে- বিইআরসি, নাকি বিপিসি? দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে বিইআরসি যে কমিটি করেছে, সেখানে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। তিনি জানান, বিইআরসি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই বছরে ৫৬ লাখ টাকা বিভিন্ন ধরনের ফি নিচ্ছে। এসব ফি কমাতে হবে। এলপিজি খাতে বিলিয়ন ডলারের ওপর বিনিয়োগ আছে বলে তিনি জানান।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের প্রতিনিধি জাকারিয়া জালাল বলেন, সিলিন্ডারের জন্য কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। একটি সিলিন্ডার তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার টাকা। মার্কেটে ছাড়া হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এ ভর্তুকি সরকার দিচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় ২০১৭ সালে ৮১ জন এবং ২০১৮ সালে ১৫ জন মারা গেছেন। সিলিন্ডারের মান নিশ্চিত করা জরুরি। এটা না মানলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা উচিৎ।
বিইআরসির সদস্য ও এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এটাই দাম নির্ধারণের চূড়ান্ত সভা নয়। সবার পরামর্শ নেব।
বেক্সিমকো এলপি গ্যাসের সিইও মৃণাল রায় বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের মিলবে না। সেদেশে সরকার এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশে মোংলা ও চট্টগ্রামে পরিবহন ব্যয়ে তারতম্য আছে। চট্টগ্রামে বড় জাহাজ ভিড়তে পারেনা। আরও অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। ফলে সারাদেশের জন্য অভিন্ন দাম ঠিক করে দেয়া যাবে না। দামের ক্ষেত্রে একটি সিলিং করা যেতে পারে। এর চেয়ে কম বা বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। সরকার সেটি দেখভাল করবে।
বিন হাবিব বিডি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান আজিজুল ইসলাম বলেন, অস্বাভাবিক বিনিয়োগের কারণে অনেকেই ঋণখেলাপির দ্বারপ্রান্তে। প্রমিটা এলপিজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মজিবুর রহমান বলেন, প্রতি মাসে মূল্য নির্ধারণ করা হলে ভালো। কমিটিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের প্রতিনিধি জাকারিয়া জালাল বলেন, সিলিন্ডারের জন্য কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। একটি সিলিন্ডার তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার টাকা। মার্কেটে ছাড়া হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এ ভর্তুকি সরকার দিচ্ছে না।তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিটিকে জানান, বিল করার পরে শিল্পের ক্ষেত্রে ৪৫ দিন, আবাসিকে ২১ দিন ও সিএনজির ২০ দিনের সময় শোধ করার কথা। কিন্তু এই সময়ে অনেকে বিল শোধ না করার কারণে এই বকেয়া বাড়ছে।
আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার পরও কীভাবে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, এর নেপথ্যে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। এসব অসাধু ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি।
শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আবু জাহির, আলী আজগর, নূরুল ইসলাম তালুকদার, আছলাম হোসেন সওদাগর ও নার্গিস রহমান অংশ নেন।