এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বোতল গ্যাস বা তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা কোথাও বাস্তবায়ন হয়নি। বেসরকারি সরবরাহকারীদের কেউ সে দামে এই গ্যাস বিক্রি করেনি। কোথাও নির্ধারিত দামে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, কোন নির্দেশ আসেনি। তাই আগের দামেই বিক্রি করছি।
এদিকে প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে দাম ঠিক করার জন্য কমিটি করেছে বিইআরসি।
উদ্যোক্তারারাও এই দাম মেনে নেয়নি। দাম কম হওয়ায় তারা পর্যালোচনা করে আবার নির্ধারণের আবেদন করেছে। যদিও ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাজার তুলনায় বেশি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের মতই যেখানে যে দামে বিক্রি হচ্ছিল সেখানে সে দামেই বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। বিইআরসি’র আদেশের কোন প্রতিফলন বাজারে পড়েনি।
উচ্চ আদালতের আদেশে বিইআরসি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। সে উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিল বেসরকারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু দাম নির্ধারণের পরই তা মেনে নেইনি। নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে আবার দাম ঠিক করার আবেদন করেছে তারা।
১২ই এপ্রিল এলপি গ্যাস ও অটোগ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বিইআরসি। সাড়ে ১২ কেজির দাম বেসরকারি ৯৭৫ টাকা এবং সরকারি ৫৯১ টাকা।
এদিকে নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নে জন্য মূল্য তালিকা ঝোলানোর পরিকল্পনা করছে বিইআরসি। পরিবেশক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দোকানে এ মূল্য তালিকা ঝোলানো হবে।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহি চৌধুরী জানান, বিক্রেতাদের দোকানে মূল্যতালিকা টানানো আদেশ দেয়া হয়েছে। ভোক্তা সেই তালিকা দেখে গ্যাস কিনতে পারবেন। ভোক্তাদের সচেতনতা এখানে খুব জরুরি।
পরিবেশক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদেরকে এখনও উদ্যোক্তারা কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ফলে তারা আগের দামেই বিক্রি করছে বলে জানিয়েছে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, কমিশন যে আদেশ দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতেই হবে। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এতদিন এলপিজির দাম উদ্যোক্তারা নির্ধারণ করতো। এই প্রথম সরকার গণশুনানির মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
বাজারের তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বিইআরসি নির্ধারিত দামের চেয়ে কোম্পানি ও এলাকা ভেদে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আমদানি, সরবরাহ, মজুদসহ সকল খরচের চেয়ে কম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য দাম পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বার্তা সংস্থা সারাবাংলা এর তথ্য অনুযায়ি, চট্টগ্রামের হালি শহরে ১২ কেজির টোটাল গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা। বসুন্ধরা ও ওমেরা ১ হাজার ৫০ টাকা। সরকারি পদ্মা, মেঘনা, যমুনাও বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। বরিশালে বসুন্ধরা, ওমেরা, বেক্সিমকো, নাভানা, পদ্মা ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা। ভোলায় এমনই দাম।
খুলনায় ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। শেরপুরে ১ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। রাজশাহীতে ১ হাজার টাকা, জামালপুরে ১ হাজার ১০০ টাকা। ময়মনসিংহে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। নেত্রকোনায় ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, বিইআরসি এলপিজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে পারেনি। উৎপাদন পর্যায়ে সিলিন্ডার প্রতি খরচ কম ধরা হয়েছে। পরিবেশকের কাছে সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়া হয়। সে খরচ ধরা হয়নি। উৎপাদনকারী কোম্পানির মুনাফায় রাখা হয়নি।
দাম ঘোষণার সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, মার্চে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি কোম্পানি সৌদি আরামকোর প্রোপেনের মূল্য প্রতি টন ৬২৫ ডলার ও বিউটেনের মূল্য প্রতি টন ৫৯৫ ডলার ধরে এবং এলপিজিতে প্রোপেন ও বিউটেনের অনুপাত ৩৫ঃ৬৫ ধরে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মাসে সৌদি আরামকো দাম নির্ধারণ করে। আরামকোর সাথে মিল রেখে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশেও প্রতি মাসে দাম নির্ধারিত হবে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে এবং তথ্য যাচাই-বাছাই করে দাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোক্তারা বাড়তি দাম দেবেন না। কমিশনের আদেশ বাস্তবায়ন করতে লাইসেন্সধারীরা বাধ্য। তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বিইআরসিকে চিঠি দিয়ে আদেশ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে। আদেশ না মানলে কমিশন আইনের ৪২ এবং ৪৩ ধারা মতে ব্যবস্থা নিতে পারে। এলপিজি বোতলজাতকারী কোম্পানি এবং পাইকারি ও খুচরাসহ সব ধরনের বিক্রেতাদের জন্য এ মূল্য আদেশ মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
বোতল গ্যাস (এলপিজি) এর নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সাড়ে ১২ কেজি সরকারি ৫৯১ টাকা এবং বেসরকারি’র দাম
গাড়িতে ব্যবহার করা অটোগ্যাসের দাম লিটার প্রতি ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি এলপিজি এর দাম ঠিক করা হয়েছে ৭৬ টাকা ১২ পয়সা। মূসকসহ এই দাম হবে ৮১ টাকা ৩০ পয়সা। এই হিসাবে সাড়ে ৫ কেজির দাম ৪৪৭ টাকা ১৫ পয়সা, ১ হাজার ১৬ টাকা ১৫ পয়সা, ১৫ কেজি এক হাজার ২১৯ টাকা ৫০ পয়সা, ১৬ কেজি ১ হাজার ৩০০ টাকা ৮০ পয়সা, ১৮ কেজি ১ হাজার ৪৬৩ পাকা ৪০ পয়সা, ২০ কেজি ১ হাজার ৬২৬ টাকা, ২২ কেজি ১ হাজার ৭৮৮ টাকা ৬০ পয়সা, ২৫ কেজি ২ হাজার ৩২ টাকা ৫০ পয়সা, ৩০ কেজি ২ হাজার ৪৩৯ টাকা, ৩৩ কেজি ২ হাজার ৬৮২ টাকা ৯০ পয়সা, ৩৫ কেজি ২ হাজার ৮৪৫ টাকা ৫০ পয়সা এবং ৪৫ কেজি ৩ হাজার ৬৫৮ টাকা ৫০ পয়সা।
এদিকে প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা।