কপ৩০–এর প্রধান ভূমিকায় কারা, তারা কী চায়?

রফিকুল বাসার:

জাতিসংঘের কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলন এখন চলছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে—

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলোচক, কূটনীতিক ও নেতারা ব্রাজিলের বেলেম শহরে একত্র হয়েছেন

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, দেশগুলোকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর তাদের নিঃসরণ কমানোরপরিকল্পনা (এনডিসিস) জমা দিতে হয়। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে এর সময়সীমা শেষ হলেও, অল্প কয়েকটি দেশ সময়মতো তা জমা দিয়েছে। কপ৩০ –এর আগ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি দেশ তাদের পরিকল্পনা দিয়েছে, কিন্তু সেগুলোও অপর্যাপ্ত।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এসব পরিকল্পনা ২০৩৫ সালের মধ্যে নিঃসরণ মাত্র ১০ শতাংশ কমাতে পারবে, অথচ ১.৫° সেলসিয়াস সীমার মধ্যে থাকতে হলে ৬০ শতাংশ কমানো প্রয়োজন। এমন অবস্থায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ২.৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত।

যদিও এনডিসিস আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচিতে নেই, তবুও এটি এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। এই সংকট সমাধানে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া কপ৩০ সফল হবে না।

বড় ভূমিকায় কারা, আর তারা কী চায়?

ব্রাজিল:

আমাজন রেইনফরেস্টের মাঝখানে অবস্থিত ছোট্ট শহর বেলেমে ৫০ হাজার মানুষের বিশাল এই সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত প্রথম থেকেই নিঃসন্দেহে বিতর্কিত ছিল। তবুও ব্রাজিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই আয়োজন সফলভাবে করতে।

লাতিন আমেরিকার শক্তিধর দেশ ব্রাজিল, যার জনসংখ্যা ২১ কোটি ৩০ লাখ, বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এখন অষ্টম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু এর প্রকৃত পরিচয় আমাজন বনাঞ্চল—যা জলবায়ু সংকটে বিপর্যস্ত, রেকর্ড খরা, দাবানল এবং গবাদি পশুপালক ও সয়াবিন চাষিদের দখলদারিতে জর্জরিত। তবুও এটি বিশ্বের “ফুসফুস” এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আশ্রয়স্থল।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, স্পষ্ট বার্তা দিতে চান— কপ৩০ হবে আমাজনের কপ। তার মূল প্রকল্প হলো “ট্রপিকাল ফরেস্ট ফরএভার ফ্যাসিলিটি (TFFF)”, ১২৫ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল, যা বন ধ্বংস না করে স্থানীয় জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।

তবে শুরুটা তেমন মসৃণ নয়—যুক্তরাজ্য এখনো তহবিলে অর্থ দিতে রাজি হয়নি, এবং অন্যান্য দেশের প্রতিশ্রুতিও প্রত্যাশার তুলনায় কম। তবুও যদি প্রকল্পটি এগোয়, তবে এটি বিশ্বজুড়ে বনাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জীবনরক্ষা হতে পারে।

তবে ব্রাজিল এখনো সম্মেলনের মূল বিষয়—গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো—নিয়ে খুব আগ্রহী নয়।

যুক্তরাষ্ট্র:

ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বলেছেন, জলবায়ু সংকট হলো ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতারণা’, ‘একটি পরিবেশ বান্ধব জালিয়াতি’, যা ‘বোকা মানুষের পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি।’ তিনি কপ৩০–এ উপস্থিত থাকছেন না।

আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সাম্প্রতিক বৈঠকে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র কার্বন কর আরোপ ও নিঃসরণ কমানোর প্রস্তাব ঠেকাতে ‘হুমকি ও ভয় দেখানো’ কৌশল নিয়েছে। প্রতিনিধিদের ফোন ও ইমেইলে হুমকি দেওয়া হয়েছে—তারা প্রস্তাবে ভোট দিলে বাণিজ্যিক প্রতিশোধ (যেমন শুল্ক) বা এমনকি ব্যক্তিগত ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কার্বন কর আরোপের প্রস্তাব এক বছরের জন্য যদি স্থগিত হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র আরও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে।

ট্রাম্পের আগের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র কপ–এ প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। এবার, তিনি বিভিন্ন ফ্রন্টে অনেক সক্রিয়। ফলে কপ৩০–এ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খুবই অন্য রকম হতে পারে।

চীন:

যদিও সি চিনপিং ব্যক্তিগতভাবে বেলেমে যাচ্ছেন না, তার উপস্থিতি সর্বত্র অনুভূত হবে। তিনি এ বছরের শুরুতে প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে ভিডিও বার্তায় এবং জাতিসংঘে দৃঢ় অবস্থান নেন। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে—চীন এবার কপ৩০–এ কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

সি ও লুলার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এবং আগস্টে তারা দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলেছেন।

চীন সময়মতো কার্বন কমানোর পরিকল্পনা এনডিসি দেয়নি, তবে কপ৩০ শুরু হওয়ার আগেই তা জমা দিয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনাটি হতাশাজনক—২০৩৫ সালের মধ্যে নিঃসরণ মাত্র ৭–১০শতাংশ কমানোর লক্ষ্য, অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্তত ৩০ শতাংশ কমানো প্রয়োজন।

চীনের কম প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশি অর্জনের ইতিহাস আছে। বাস্তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দেশটি অগ্রগামী—বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেকই এখন নবায়নযোগ্য উৎস থেকে, এবং জ্বালানি ব্যবহারের এক-তৃতীয়াংশও সেখান থেকে আসে।

দেশটিতে বিক্রি হওয়া অর্ধেক গাড়ি এখন বৈদ্যুতিক, আর তাদের সস্তা সৌর ও বায়ু প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য খাতে বিপ্লব এনেছে।

যদি চীন কপ৩০–এ মিথেন নিঃসরণ কমাতে নতুন প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে তা বৈশ্বিকভাবে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।

 

ভারত:

গত নভেম্বরে আজারবাইজানের বাকুতে কোপ২৯-এর শেষ প্রহর ছিল এক অস্থির ও দীর্ঘায়িত নাটক—যার মূল চরিত্র ছিল ভারত।

কপ২৯ –এর শেষ রাতের নাটকীয় সমাপ্তির পেছনে ছিল ভারত। চুক্তি অনুমোদনের সময়—যা নির্ধারিত সময়ের দেড় দিন অতিবাহিত করেছিল—ভারত আপত্তি তোলে। অন্যান্য দেশ যখন একমত ভেবেছিল, তখন ভারত আপত্তি তোলে।

ভারতের প্রতিনিধি দল জানায়, উন্নয়ন ব্যাংকে তাদের অবদান কীভাবে গণনা হবে তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। অন্যান্য দেশগুলো মনে করেছিল তারা ভারতের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, কিন্তু ভারতীয় আলোচকরা একমত হননি।

ভারত শেষ মুহূর্তে প্রশ্ন তোলে—উন্নয়ন ব্যাংকে তাদের অবদান কীভাবে গণনা হবে। অন্যরা ব্যাখ্যা দিলেও ভারত সন্তুষ্ট হয়নি এবং চুক্তিকে “দরিদ্র বিশ্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা” বলে ঘোষণা করে।

আলোচনার মূল বিষয় ছিল জলবায়ু অর্থায়ন—দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু অর্থায়নের একটি কাঠামো নির্ধারণে সব দেশ একমত হয়েছিল যে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিবছর দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ১ দশমিক ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার দেয়া হবে, যাতে তারা নির্গমন কমাতে ও চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা পায়। উন্নত দেশগুলো নিজেদের কোষাগার থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়—যা জলবায়ু আন্দোলনকারীদের মতে যথেষ্ট নয়, যদিও এটি বর্তমান ১০০ বিলিয়ন ডলারের তিনগুণ।

অবশেষে সম্মেলনের সমাপ্তি নেমে যায়। ভারতের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এই চুক্তি দরিদ্র বিশ্বের প্রতি “বিশ্বাসঘাতকতা”।

ভারতের ক্ষোভ বাস্তব হলেও, অংশগ্রহণকারীদের অনেকে মনে করেন শেষ মুহূর্তের কিছুটা ছিল রাজনৈতিক নাটক। ভারত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে জলবায়ু সংকট মোকাবিলার খরচ উন্নত দেশগুলোকেই বহন করতে হবে। আর দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।

তবে ভারতের অর্থনীতি এখন দ্রুত চীনের পথ অনুসরণ করছে। এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদক, যেখানে প্রায় অর্ধেক স্থাপিত ক্ষমতা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে।

কয়লা এখনো মূল ভরসা—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বছর দেশটির এক বিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন উদযাপন করেছেন—কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভারতের মারাত্মক বায়ুদূষণ সমস্যা সমাধানের জন্য অপরিহার্য, তাই ভবিষ্যৎ এখন “পরিষ্কার শক্তির” দিকেই।

নরেন্দ্র মোদি এ বছরের জুলাইয়ে ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন, তাই বাকুর মতো নাটকীয় কোনো সমাপ্তি এবার সম্ভাবনা কম। তবে ভারতের আলোচকরা নিজেদের “বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর” হিসেবে তুলে ধরতে থাকবে, এমনকি মোদি কপ৩৩ আয়োজনের জন্যও আলোচনায় থাকতে পারেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন:

কপ৩০ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে, মঙ্গলবার রাতে ইইউ কর্মকর্তাদের জেগে থাকতে হয়েছিল, কারণ সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছিল। ব্রাসেলস দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচির নেতা—যার উদ্যোগ ছাড়া প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়িত হতো না—তাই নিজেদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান নিয়ে এত দেরি করা ছিল অভাবনীয়।

এই মতবিরোধ দেখায় যে ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান এবং জলবায়ু কর্মসূচির প্রতি প্রতিক্রিয়া এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। ফ্রান্স ও জার্মানি, যারা আগে নেট জিরো এজেন্ডার চ্যাম্পিয়ন ছিল, কিন্তু এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আছে। হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্রসহ বেশ কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় ছোট দেশ প্রকাশ্যে পরিবেশ বান্ধব নীতির বিরোধিতা করছে।

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল হতাশাজনক: ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬৬ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৭২ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্গমন কমানো, যা ২০৪০ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ কমানো একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এটিকে “অত্যন্ত দুর্বল” বলে সমালোচনা করেছে।

ইউরোপীয় কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে পরিবেশ বান্ধব অর্থনীতি নিয়ে আরও মুখোমুখি হয়েছে। জলবায়ু কমিশনার ভপকে হোকস্ত্রা গ্রীষ্মে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ইউরোপ আর এককভাবে জলবায়ু নেতৃত্ব দেবে না—অন্য দেশগুলো, বিশেষত চীন, এখন তাদের ভূমিকা নিতে হবে।

কপ৩০-এ সুরটা হতে পারে আরও সহযোগিতামূলক: যদি ইইউ ও চীনের মধ্যে “পৃথিবী রক্ষার জোট” গঠনের কোনো প্রতীকী পথ তৈরি করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে সেটি হবে এক বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য।

ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের জোট:

ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো সবসময়ই কপ সম্মেলনগুলোতে নৈতিক বিবেকের ভূমিকা পালন করে—ধনী দেশগুলোকে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বড় দূষণকারীদের জবাবদিহি দাবি করে। তারা প্যারিস চুক্তির অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিল এবং এখন তারা গভীরভাবে হতাশ, কারণ ২০১৫ সালের সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কোনো নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না—বিশ্ব উষ্ণতা ইতিমধ্যে ১.৫°সেলসিয়াস সীমা অতিক্রম করছে।

তারা এবারও সব দেশকে—বড় বা ছোট, ধনী বা দরিদ্র—তাদের যৌথ অঙ্গীকারের জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে চায়।

শক্তিশালী আইনি অস্ত্র:

প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট দেশ ভানুয়াতু এক উদ্যোগের নেতৃত্ব দেয়, যার ফলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ঘোষণা করে যে দেশগুলোকে জলবায়ুর ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনই সেই ক্ষতির মূল কারণ।

এই রায়ের পূর্ণ প্রভাব এখনো দেখা যায়নি, তবে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এবার কপ-এ আসছে সেটি বাস্তবায়নের দাবিতে। আরেকটি বড় বিষয় হলো “জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসা”—যা দুবাইয়ের কপ২৮-এ গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে ব্যাপক বিরোধিতা ও পশ্চাৎগামিতার মুখে পড়ে। ব্রাজিল এই বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রাখতে অনীহা দেখালেও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো এবং তার মিত্ররা এতে অগ্রগতি চায়।

এছাড়াও এনডিসি বা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানগুলো তাদের নজরে রয়েছে, যাতে সেগুলোর ঘাটতি দূর করার জন্য একটি স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করা যায়।

স্বল্পোন্নত দেশসমূহের গ্রুপ (এলডিসিস):

এই কপ সম্মেলন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে কঠিন। বেলেমে প্রতিনিধি পাঠানো, আবাসনের অস্বাভাবিক ব্যয় বহন করা—সব মিলিয়ে অনেক দেশের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। অতীতে যেমন তাদের প্রতিনিধিদল ছোট ও অর্থস্বল্প ছিল, এবার পরিস্থিতি আরও জটিল।

গত বছর তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কপ ছিল, কারণ এটি ছিল প্রথমবার যখন জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আনুষ্ঠানিকভাবে “দরিদ্র বিশ্বের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন” আলোচনা করা হয়। ফলাফল অনেকের কাছে হতাশাজনক হলেও, তারা এখনো আশাবাদী যে নতুন ধরণের অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি হবে, যা তাদের জনগণকে দারিদ্র্য থেকে উত্তোলন করতে সাহায্য করবে জীবাশ্ম জ্বালানির অভিশাপ ছাড়াই।

এই দেশগুলোর অনেকেই উচ্চ ঋণের বোঝায় জর্জরিত, তাই ঋণমুক্তির পথ খোঁজা এখন জরুরি—যেমন ‘জলবায়ুর বিনিময়ে ঋণ মওকুফ’ ব্যবস্থার মাধ্যমে, পাশাপাশি প্রচলিত অনুদানের মাধ্যমেও।

কপ৩০-এর প্রাক্কালে প্রকাশিত “বাকু থেকে বেলেম রোডম্যাপ”—একটি জলবায়ু অর্থায়ন নীলনকশা— এলডিসি গোষ্ঠীর মূল দাবির কেন্দ্রবিন্দু। তারা চায়, গত বছরের অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতিগুলো এবার বাস্তব তহবিল পরিকল্পনায় রূপ নিক।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান