কোথায় কখন লোডশেডিং, সময় বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
বিডিনিউজ:
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি লোড শেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “বিদ্যুতের ব্যাপারে আমাদের শুধু সাশ্রয়ীই হতে হবে না, আজকে যেমন আমি চিন্তাও করেছি আমি বলব, কিছুটা সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন একটু কমিয়ে দিয়ে… আমাদের যেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপাদানগুলো, সেগুলো যেন আমরা কম ব্যয় করতে পারি।”
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
জ্বালানি সমস্যায় দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোড শেডিং চলছে। সেজন্য রোববার এক ফেইসবুক পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
এ বিষয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন আমরা একটা সুনির্দিষ্ট সময় যদি ধরে দিই, যে একেক এলাকাভিত্তিক, যে কিছুক্ষণের জন্য সেখানে বিদ্যুতের কিছু লোড শেডিং হবে… হঠাৎ যাবে, হঠাৎ আসবে- (এমন) না, মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারবে।
“সেভাবেই আমাদের কিছু কিছু পদক্ষেপ এখন থেকেই যদি আমরা নিই, তাহলে আগামী দিনে যে আরো সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে, সেটার থেকে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব।”
অনেক দেশই যে এখন জ্বালানি সংকটে ভুগছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এমনকি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, বিভিন্ন দেশে যেমন মূল্যস্ফিতি বেড়েছে, তেমনি সেখানে বিদ্যুতের জন্যও এখন হাহাকার। তারা বলেই দিয়েছে, দিতে পারবে না। এই রকম নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে ‘সতর্ক হয়ে চললে’ সমস্যা এড়ানো যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“আমরা যদি সতর্ক হয়ে চলি, ইনশাল্লাহ আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সেটুকু অন্তত বলতে পারি। আমি সবাইকে এই অনুরোধটা করব।”
করোনাভাইরাসের মহামারী এবং বিশ্বজুড়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“এক দিকে করোনার একটা অভিঘাত, তার উপর এসেছে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ। যার ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বে যেমন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক দেশে এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার।”
গত এক যুগের চেষ্টায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুতের উৎপাদনের যে উপকরণগুলো, সেগুলোর দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে।”
বিশ্বে তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, কয়লা সংকট এবং পণ্য পরিবহনে অস্থিরতার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বিভিন্ন পণ্যের ‘ঘাটতি’ দেখা যাচ্ছে বর্ণনা করে সংকট মোকাবিলায় সাশ্রয়ী হয়ে নিজেদের সঞ্চয় বাড়নোর পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মন্দা এড়াতে এক ইঞ্চি জমি বা জলাধার অনাবাদি রাখা যাবে না। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, তা আবাদের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
“প্রত্যেকটা পরিবার, প্রত্যেকটা মানুষ এবং প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান… আমার মনে হয় এই পদক্ষেপ যদি আমরা নিই, এই যে বিশ্বব্যাপী যে মন্দাটা, এর অভিঘাত থেকে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব।”
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে এ সেতু নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার কথা বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে যারা হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল, বা আমাকে, আমার পরিবারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে এবং আমার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টাকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে যারা অসম্মান করতে চেয়েছিল, তার উপযুক্ত জবাব আমরা দিয়েছি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের মাধ্যমে।
“এটা শুধু পদ্মা সেতুই না।পদ্মা সেতু আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌম্ব এবং আমরা যে একটা স্বতন্ত্র জাতি সেই স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা সেটারই বহিঃপ্রকাশ।”
নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর মনোভাবও বদলে গেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা আগে মনে করত, বাংলাদেশ শুধু ভিক্ষা চায়, অনুদান চায়… বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ এবং বাঙালি জাতি একটি জাতি। সেই জাতি কারো কাছে মাথা নোয়াবে না… আমরা চলতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।“
শেখ হাসিনার ভাষায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ‘সক্ষমতা’ অর্জন করেছে, দারিদ্র্যের হার ‘কমেছে,’ মানুষের ‘ঘরে ঘরে’ বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।
সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, “আমি প্রথম ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠা করি। ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। এবং আমরাই প্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ দিই।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশকে আর্থ সামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে সরকারের ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন এবং সেটি বাস্তবায়নের কথা জানান শেখ হাসিনা।
“যেটা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করা, প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করা, আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন করা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবং প্রয়োজন মতো সম্প্রসারণ আমি করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করবো না। আমরা শান্তি চাই এবং জাতির পিতা আমাদের প্রতিরক্ষা নীতিমালা দিয়েছেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতি মেনে চলি।”
আবার স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীকগুলো যেন যথাযথভাবে গড়ে ওঠে, সেজন্যও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।