খরচের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় বিদ্যুৎ জ্বালানি
বিদ্যুৎখাতে এবার বরাদ্দ প্রায় শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে সরকারে সর্বোচ্চ খরচের অগ্রাধিকার তালিকায় প্রথম রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ খরচের তালিকার শীর্ষে এই খাত থাকবে। তবে এর বেশিরভাগ বরাদ্দই বিদেশী ঋণ নির্ভর।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পেশ করা বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। একই সাথে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস-কয়লা উন্নয়ন। আবাসিক গ্রাহকদের আর গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না বলে নতুন করে জানালেন অর্থমন্ত্রী। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সৌর প্যানেলে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের বিষয়ে নিদিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তেল বিক্রির আয় থেকে দেনা শোধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আসন্ন বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। বিদ্যুৎ জ্বালানিকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারের খরচের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এই খাতে ২১২ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ২০১৭-১৮ পর্যন্ত বিদ্যুৎ জ্বালানি’র পর আছে সড়ক, রেল, বন্দরসহ ভৌত কাঠামো, মনবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সরকারি সেবা দিতে তথ্য প্রযুক্তি। অগ্রাধিকার তালিকায় এছাড়াও রাখা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কর্মসূচি।
অর্থমন্ত্রীর দেয়া বাজেট প্রস্তাবে বিদ্যুৎ বিভাগের এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। যা মোট এডিপি’র ১৭ শতাংশ। এই বরাদ্দ ২০১৪-১৫ অর্থবছর আছে আট হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এবার প্রায় শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগে অনুন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। বাজেটে জ্বালানি খাতে উন্নয়ন খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন বরাদ্দ ৪৩ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও পুরানো কেন্দ্র মেরামত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া সঞ্চালন, বিতরণ, বর্তমান লাইনের সংস্কার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি বাড়ানো, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কার্যক্রম, লোড ব্যবস্থানার দক্ষতা বাড়ানো, সিস্টেম লস কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোর কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোকে। কয়লা খনি উন্নয়ন করাকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া কৃষি, যোগাযোগ, শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে গ্যাস নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় সিস্টেম লস কমানো, তেল বিপণন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানোকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি ২০০৯ হতে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে অতিরিক্ত ছয় হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ দুই হাজার এবং সৌর ১৭৫ মেগাওয়াটসহ) হয়েছে। ২০টি গ্যাসফিল্ড থেকে দৈনিক দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। বক্তৃতায় তিনি আগামী দিনের বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে ২১২ দশমিক ২ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করার লক্ষ ঠিক করা হয়েছে। শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক খাতে জ্বালানি সাশ্রয় ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ২০১৬ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। এজন্য জ্বালানি দক্ষতার মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে।